রংপুরের বদরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে দুই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লাঞ্ছিত
করতোয়া ডেস্ক : রংপুরের বদরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ের রণীশংকৈলে কৃষকদের মাঝে সার বিতরণকালে দুই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, রংপুরের বদরগঞ্জে নিজেদের দাবিকৃত সার না পাওয়ায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমিদুল হক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল আমিন সরকার। গত সোমবার সকালে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি এলাকায় এঘটনা ঘটে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সার বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করতে যান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমিদুল হক। এসময় তার কাছে তিন বস্তা টিএসপি(ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার দাবি করেন ওই ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি এলাকার দাড়িয়াপাড়ার শাহ জালালের দুই ছেলে ফরিদুল ও ফরহাদ।
কিন্তু উপসহকারী কর্মকর্তা তাদের এক বস্তা টিএসপি সারসহ অন্যান্য সার দিতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এসময় ওই উপসহকারী কর্মকর্তা তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, সারের কোন ঘাটতি নেই। তবে একযোগে একজন কৃষককে তিন বস্তা টিএসপি সার দেয়ার এখতিয়ার কোন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার নেই।
একথা শোনার সাথে সাথেই ফরিদুল ও ফরহাদ দু’জনই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। অবশ্য এলাকার লোকজন ওই দু’ভাইয়ের হাত থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মারাত্মক আহতাবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন এবং তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এঘটনায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমিদুল হক বাদি হয়ে ফরিদুল ও ফরহাদের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল আমিন সরকার জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে আসামিরা গা ঢাকা দেয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সার বিতরণের সময় এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মারধরের শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উমরাডাঙ্গী বাজারে মল্লিক ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হোসেন কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ করছিলেন। ঠিক সেই সময় তিনটি ভ্যানে করে ৫ জন কৃষক একজনের নামেই ৩৩ বস্তা সার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে সার না পাওয়া অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকতার হোসেন দুপুরের খাবারের কথা বলে স্থান ত্যাগ করেন।
পরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুর রশিদ মামুন ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সেখানে আসার অনুরোধ জানান। কৃষি কর্মকর্তা সইদুল ইসলাম আকতার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে বিতরণস্থলে এলে উত্তেজিত জনতা আকতার হোসেনকে মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাণীশংকৈল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। মল্লিক ট্রেডার্সের সত্তাধিকারী কিংবা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সইদুল ইসলাম বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়।
মাথায় আঘাত পেয়েছেন, দাঁত ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দিনাজপুরে নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগীর মতামতের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে থানার কর্মকর্তা তদন্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিস লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/148730