চকলেটের অজানা ইতিহাস

প্রকাশিত: জানুয়ারী ২৫, ২০২৩, ০৬:৩২ বিকাল
আপডেট: জানুয়ারী ২৬, ২০২৩, ১১:৫৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

অত্যন্ত প্রিয় চকলেটের উৎস হল আজ থেকে প্রায় ২৭৩ বছর আগে। বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ এর নাম দিয়েছিলেন "ক্যাক্যাও"। মূলত উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে জন্মানো এই উদ্ভিদের বাসস্থান ছিল আমাজন এর ঘন জঙ্গলে। এই ফলের পাকা বীজ প্রাথমিক অবস্থায় তেতো হয়। ফারমেনট করা ওই বীজগুলি কে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর ওইগুলিকে রোলারের সাহায্যে পেষা হয়। বীজের ভেতরে যে স্নেহজাতীয পদার্থ আলাদা করে সেখান থেকে কোকা পাউডার আলাদা করে নেওয়া হয়। যা থেকে পড়ে তরল চকোলেট পাওয়া যায়।

কোকো গাছের ফল থেকে তৈরি হয় চকলেট। সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ আমেরিকায়  পাওয়া যায় এ গাছ। গুটি গুটি ফলগুলোর একেকটিতে ৪০টির মতো বিন বা শুটি থাকে। শুটিগুলো শুকিয়ে, তারপর পুড়িয়ে বানানো হয় কোকো বিন। 

কোকো থেকে চকোলেটের উৎপত্তি প্রথম কখন ঘটেছিলো বা কারা এটি আবিষ্কার করেছিল তা ঠিক স্পষ্ট নয়। তবে আমেরিকান-ইন্ডিয়ান স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরের সাংস্কৃতিক আর্টস কিউরেটর, হেইস ল্যাভিসের মতে, ১৫০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে গড়ে ওঠা প্রাচীন ওলমেক সভ্যতায় চকোলেটকে চায়ের সাথে একটি উত্তেজক যৌগ হিসেবে ব্যাবহার করা হতো।

ধারণা করা হয়, ওলমেকরা কোকো দিয়ে তাদের উৎসব-আয়োজনের বিশেষ পানীয় বানান। অবশ্য ইতিহাসে যেহেতু এ কথা স্পষ্টভাবে লেখা নেই, ফলে এ সম্পর্কে দ্বিমত রয়েছে।

কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন, ওলমেকরা স্রেফ তরল পদার্থ হিসেবেই কোকো বিনগুলো ব্যবহার করতেন কিংবা গুটিগুলো সাজিয়ে রাখতেন।ওলমেকরাই যে কোকো সম্পর্কে নিজেদের জ্ঞান সেন্ট্রাল আমেরিকান মায়া সভ্যতায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদদের সন্দেহ নেই। মায়া সভ্যতার লোকেরা চকলেট শুধু পানই করতেন না, একে খুব সমীহও করতেন।

মায়ার লিখিত ইতিহাসে উল্লেখ আছে, বিশেষ বিশেষ লেনদেন চূড়ান্ত করার অনুষ্ঠানে চকলেট পানীয় পরিবেশন করা হতো।

যদিও মায়া সংস্কৃতিতে চকলেটের গুরুত্ব ছিল, তবে এটি শুধু সম্পদশালী ও ক্ষমতাধরদের জন্য সংরক্ষণ করা হতো না, বরং প্রায় সবাই স্বাদ নিতে পারার মতোই সহজলভ্য ছিল। অনেক মায়া পরিবারই প্রতি বেলার আহারে চকলেটের স্বাদ নিতেন। মায়া সভ্যতার সময়কালের চকলেট ছিল ঘন ও ফেনাময়; এমনকি তার সঙ্গে লাল মরিচ, মধু কিংবা পানি মেশানো হতো।

১৪২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত  আজটেক সভ্যতার লোকেরা চকলেটকে আরেকটি স্তরে নিয়ে গেছেন। তারা বিশ্বাস করতেন, এটি স্বয়ং ঐশ্বরিক উপহার। মায়াদের মতোই তারাও সুসজ্জিত পাত্রে গরম ও ঠাণ্ডা ক্যাফেইন, স্পাইসড চকলেট পানীয় পান করতেন; তবে খাবার ও অন্যান্য পণ্য কিনতে তারা মুদ্রা হিসেবেও কোকো বিন ব্যবহার করতেন। আজটেক সংস্কৃতিতে কোকো বিনকে স্বর্ণের চেয়ে দামি হিসেবে গণ্য করা হতো।

আজটেক চকলেট ছিল মূলত উচ্চবিত্তের বিলাসিতা; যদিও বিয়ে কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মাঝে মধ্যে নিম্নবিত্তরাও এর স্বাদ উপভোগ করতেন।

আজটেক চকলেটের খাদক হিসেবে সবচেয়ে কুখ্যাতি আছে দাপুটে শাসক দ্বিতীয় মন্টেজুমার। ১৪৬৬ সালে জন্ম নেওয়া এই আজটেক শাসক বেঁচে ছিলেন ১৫২০ সাল পর্যন্ত। ধারণা করা হয়, শক্তিমান ও বীর্যবান হতে তিনি প্রতিদিন গ্যালন ভর্তি চকলেট পান করতেন। আরও বলা হয়ে থাকে, নিজের সামরিক বাহিনীর জন্যও কোকো বিন সংরক্ষণ করতেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়