বগুড়ায় ধানের ভালো ফলন ও দামে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দ হিল্লোল

স্টাফ রিপোর্টার : জমিতে ফলানো সোনালি ধান ঘুরে তুলছেন বগুড়ার কৃষকরা। বাড়তি খরচের পরেও ভালো ফলনে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দ হিল্লোল। জেলাজুড়েই চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। এখন প্রায় সব কৃষকের বাড়ির উঠানেই সোনালি ধানের স্তূপ। গ্রামের পর গ্রাম ভরে উঠেছে পাকা ধানের গন্ধে। পুরো কৃষক পরিবার ব্যস্ত ধানের কাজে।
কেউ ধান কাটছেন, কেউবা মাড়াই করছেন, কেউবা আবার খড় নিয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন, আর কৃষক পরিবারের নারীরা ধান সিদ্ধ ও শুকাতে তপ্ত রোদকে গায়ে মাখছেন।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই নতুন ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষক। বাজারে ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন তারা। গত বছর নতুন ধান প্রতিমণ সর্বনিম্ন সাড়ে ৮শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এবার দাম পড়ছে এক হাজার টাকা থেকে ১৪শ’ টাকা পর্যন্ত। তবে বছর ঘুরে বেড়েছে ধান উৎপাদনের খরচও।
কৃষকরা বলছেন, এবার এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় দেখা দেয়নি। দাম বেশি পড়লেও বীজ, সার, কীটনাশক সময়মতো পেয়েছেন। তবে ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি থাকায় কীটনাশক খরচ বেশি হয়েছে। পাশাপাশি নকল ও ভেজাল ওষুধের কারণে প্রতারিতও হতে হয়েছে। ধান পাকার আগ মুহূর্তে তাপপ্রবাহে হিটশকের ঝুঁকির মধ্যেও এবার ফলন প্রত্যাশার চেয়ে ভালো।
বগুড়া সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের তরুণ কৃষক সুমন মিয়া, রবিবাড়িয়ার আমিনুল, শ্যামবাড়িয়ার সবুজ মিয়া বলেন, এবার বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ২২ মণ ধান পেয়েছেন তারা। পক্ষান্তরে এক বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
আরও পড়ুনজাতভেদে মোটা-চিকন, ভেজা-শুকনো সর্বনিম্ন ১১শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে পারছেন। খরচ বাদে ধান বিক্রি করে বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এই কৃষকরা জানান, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে ধান ঘরে তুলতে পারছেন।
শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে বাড়িত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ধান কাটতে একজন শ্রমিক ৮শ’ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছেন। সবমিলে এবারের বোরো আবাদে সার, কীটনাশক, চাষ ও সেচসহ সব কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া সূত্র বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও নিবিড় পরিচর্যায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। জেলায় এবার ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৬০ হেক্টর কম।
গত মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিকটন, এবার তা ৫৭ হাজার ৫৭০ মেট্রিকটন কমিয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৩ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন