ক্যান্সার জয় করে জার্মানির রক্ষাকর্তা আন-ক্যাথরিন বার্গার
_original_1753019796.jpg)
স্পোর্টস ডেস্কঃ আন-ক্যাথরিন বার্গারের গলায় খোদাই করা পাঁচটি শব্দ, অল উই হেভ ইস নাও। শুধু ব্যক্তিগত দর্শনের প্রতীক নয়, বরং ক্যান্সার থেকে ফিরে আসার এক জীবন্ত চিহ্ন। ইউরোর এবারের আসরে শনিবার ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জার্মানির দুর্দান্ত জয় তুলে আনেন এই ৩৪ বছর বয়সী গোলরক্ষক। পেনাল্টিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে, এমনকি নিজেও একবার স্পটকিক থেকে গোল করে জার্মানিকে পৌঁছে দেন সেমিফাইনালে।
বার্গার ইউরো ২০২২-এ ছিলেন জার্মানির স্কোয়াডে। সেবার টুর্নামেন্ট চলাকালেই জানা যায়, থাইরয়েড ক্যান্সার আবার ফিরে এসেছে। চার বছর আগে প্রথমবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তিন বছর পর, সেই রোগকে হারিয়ে আবার ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চে ফিরলেন এবং গড়লেন ইতিহাস।
শনিবার ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচের ১৩তম মিনিটেই একজন খেলোয়াড় কমে যায় জার্মানি—ক্যাথরিন হেনডরিখের লাল কার্ডে। এরপর ১০ জনের দল যেভাবে লড়েছে, তা ছিল অসাধারণ। আর সে লড়াইয়ের কেন্দ্রে ছিলেন বার্গার। মূল ম্যাচে ৯টি সেভ করেন বার্গার, ইউরোর নকআউট পর্বে গত এক দশকে যা সর্বোচ্চ। নিজ দলের খেলোয়াড়ের ব্যাকহেড থেকেও একবার বাঁচান নিশ্চিত আত্মঘাতী গোল।
পেনাল্টি শুরুর সঙ্গেই বার্গার জার্মানিকে এগিয়ে দেন—আমেল মাজরির শট ঠেকিয়ে। এরপর নিজেই স্পট থেকে নেন এক কিক, গোল করেন। শেষ দিকে যখন সারা ড্যাব্রিৎস মিস করলেন, তখন আবার বার্গারই ঠেকান এলিস সোমবাথের শট।
ম্যাচের পর তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে যা হয়েছিল, সেটা পেছনে ফেলে এখন আমি জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছি। সেমিফাইনালে আছি, এটাই এখন বাস্তব।’
আরও পড়ুন
জার্মান মিডফিল্ডার শোকে নুসকেন বলেন, ‘আমি জানতাম পেনাল্টিতে আমরা জিতব, কারণ বার্গার আমাদের গোলকিপার। ও এতটাই শান্ত ও বিচক্ষণ, ওকে দেখে আত্মবিশ্বাস আসে।’
জাতীয় দলের কোচ ক্রিশ্চিয়ান ভুক বললেন, ‘এই মেয়েটি জীবনের কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। সেই পথই ওকে ধৈর্যশীল ও শান্ত করেছে। আজ ও যেভাবে তা প্রমাণ করেছে, তা দলের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা।’
বার্গার নিজেও এই ম্যাচের নায়ক হওয়ার কৃতিত্ব দিতে চাইলেন দলের সবাইকে, ‘আমি নই, কথা হওয়া উচিত দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। এই দলের লড়াই সত্যিই অসাধারণ।’
২০১৭ সালে বার্গারের প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন তিনি বার্মিংহাম সিটির হয়ে খেলছিলেন। মাত্র ৭৬ দিন পর ফিরেছিলেন মাঠে। এরপর চেলসির হয়ে জিতেছেন পাঁচটি উইমেন্স সুপার লিগ শিরোপা। বর্তমানে খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব গথাম এফসিতে।
আজ তিনি শুধু এক গোলরক্ষক নন, ক্যান্সার জয় করে মাঠে ফিরে আসার এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। বার্গারের জন্য, এটাই জীবনের প্রমাণ—‘অল উই হেভ ইস নাও।’
মন্তব্য করুন