জামায়াতকে ‘নাম পরিবর্তনের পরামর্শ’ ফরহাদ মজহারের

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে নাম পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
আজ শনিবার (১৯ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আইডিএল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ) বিলুপ্ত করে জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনীতিতে পুনরায় আত্মপ্রকাশ রাজনৈতিক দুরদর্শিতার ঘাটতি প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রথম প্রয়োজন একটি গণমুখী গঠনতন্ত্র। জনগণকে বুঝাতে হবে গঠনতন্ত্র কী এবং কেন তা প্রয়োজন। যাতে দেশে আর কখনও ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে-সেই লক্ষ্যে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানানো জাতির জন্য বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গঠনতন্ত্র ও সংবিধান এক নয়। সংবিধান একটি আইনি কাঠামো মাত্র, যেখানে গঠনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র ও সংগঠন পরিচালনার মূল দর্শন। ড. কামাল হোসেন সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যা জাতির জন্য বিভ্রান্তিকর।
আরও পড়ুনফরহাদ মজহার বলেন, ‘চট্টগ্রাম হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। হাটহাজারীর মতো অঞ্চলে মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। যেখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে অংশ নিচ্ছেন। এই ঐতিহ্য যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। আর কখনও যেন দাড়ি-টুপি বা পাঞ্জাবি পরা কাউকে জঙ্গি কিংবা গেরুয়া বসন পরা কাউকে বিদেশি দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করা না হয়।
সব ধরনের ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদ আছে, ধর্ম নিরপেক্ষতার ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধতার ফ্যাসিবাদ সব ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে জনগণের নিজস্ব গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতি দূরীকরণ এবং স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, বন্দরকে ঘুষ-দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কাস্টমসকে বন্দর থেকে আলাদা করতে হবে। দুর্নীতি করার জন্য পণ্য দিনের পর দিন বন্দরে রেখে দেয় কাস্টমস কর্মকর্তারা। খেয়াল রাখতে হবে বন্দর যাতে বিদেশি স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়। চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও বন্দরের নিরাপত্তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম হলো দেশের অর্থনীতির হৃদয়, যেখানে বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। এ শহরের ক্ষতি মানে দেশের মারাত্মক ক্ষতি। এ কারণেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।
সভায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক, সহকারী অধ্যাপক খ আলী আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সাইমা আলম ও রাজনৈতিক ও বিশ্লেষক মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস।
মন্তব্য করুন