আপাতত স্বস্তি মিলেছে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে। এবারের ঈদের ছবি সাফল্য পেয়েছে। তাও দীর্ঘ কয়েক দশক পর। এমনিতে ছবির ব্যবসার মৌসুম ঈদে ছবি ভালো ব্যবসা করে। কারণ এ সময়টা উৎসব আর বিগ বাজেট ও মানসম্মত ছবি মুক্তি পায়। ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকেই নানা প্রতিকূলতায় ছবির ব্যবসা একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে।
চলচ্চিত্রকাররা এখন ভাবছেন এবারের ঈদের ছবির এই ধারাবাহিকতা কীভাবে ধরে রাখা যায়। এবারের ঈদে মুক্তি পেয়েছে চারটি ছবি। ছবিগুলো হলো- ‘গলুই’, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘বড্ড ভালোবাসি’। এই ছবিগুলোর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ‘শান’। রাজধানীর হলগুলোতে সপ্তাহজুড়ে হাউসফুল চলছে ছবিটি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ‘গলুই’ আশাতীত সাড়া জাগিয়ে চলছে এবং ‘বিদ্রোহী’ মোটামুটি দর্শক দেখছে।
‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র নায়ক শাকিব খান এবং ‘শান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সিয়াম। বরাবরের মতো এবারও ঈদে দুই ছবি নিয়ে রাজত্ব ছিল শাকিব খানের। তাঁর অভিনীত ‘গলুই’ ২৮টি হলে আর ‘বিদ্রোহী’ মুক্তি পায় ১০৩ হলে। ঈদে শাকিবের এই রাজত্বে পা রাখেন নতুন নায়ক সিয়াম আহমেদ। তাঁর অভিনীত ‘শান’ মুক্তি পায় ৩৪ হলে। শাকিবের ছবির সঙ্গে লড়াইয়ে গিয়ে পিছিয়ে ছিলেন না সিয়াম। নিজেকে ভেঙে অ্যাকশন হিরো হিসেবে দর্শক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছেন।
এবারের ঈদের ছবির এমন সাফল্যে নির্মাতারা এবার নড়েচড়ে বসেছেন। আগামী কোরবানির ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়ার জন্য অনেকে এখন থেকে হিসাবনিকাশ করা শুরু করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত জানা গেছে ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে পারে তিন নায়কের বিগ বাজেটের তিনটি ছবি। এগুলো হলো শাকিব খানের ‘অন্তরাত্মা’, অনন্ত জলিলের ‘দিন : দ্য ডে’ এবং সিয়ামের ‘অপারেশন সুন্দরবন’। তিনটি ছবি নিয়ে এখন থেকেই সিনেমা হল মালিকরাও আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য এই ঈদে দর্শকদের হলমুখী হওয়ার বিষয়টি ‘সিনেমা ঘুরে দাঁড়ানোর সবুজ সংকেত’ হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্রের মানুষ। তাঁরা বলছেন, হলমুখী এই দর্শকদের এখন নিয়মিত হলে আনতে পরিচালক ও প্রযোজকদের ভাবতে হবে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে সিনেমার সুদিন ফিরবে।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াত বলেন, ‘এই ঈদে ছবি দেখার জন্য দর্শক হলে ফিরেছে- এটা চলচ্চিত্রকারদের জন্য দারুণ খবর। এই ধারাবাহিকতা কীভাবে রক্ষা করা যায়, এর জন্য সবাইকে মিলে এগোতে হবে। দেশের সিনেমা বাঁচাতে আমাদের শেষ লড়াইটা এবার করা প্রযোজন। তাই এখন দর্শকদের জন্য সেরা গল্পের সেরা ছবি নির্মাণ করতে হবে।’
এবারের ঈদে দীর্ঘ কয়েক বছরের বিরতির পর সিনেমা হলের সামনে দেখা গেছে লম্বা লাইন। ছবি দেখতে ভিড়। এটি সম্ভব হয়েছে মানসম্মত এবং দর্শক পছন্দের ছবির কারণে। টানা লোকসানের মুখে প্রযোজকরা যখন চলচ্চিত্র নির্মাণে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তখনই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এবারের ঈদ উৎসবে হলে ফিরল দর্শক। ফের প্রমাণ হলো দেশের ভালো সিনেমার দর্শক সবসময়ই থাকে।
স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত ‘শান’ হাউসফুল যাচ্ছে। ‘গলুই’ ছবিও প্রায় হাউসফুল হচ্ছে, যা শানের চেয়ে কম হলেও আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শক ছবিটি দেখছেন। দুটি ছবি নিয়েই দর্শক ইতিবাচক মন্তব্য করছেন। এটা বাংলা সিনেমার জন্য বড় ব্যাপার। এবার আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো নারী দর্শকের উপস্থিতি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।