বজ্রপাতে যেভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তাতে বলার অপেক্ষা রাখেন না, এটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। যখন বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, তখন এই বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে তিনজেলের মৃত্যু হয়েছে।
গত রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার বাহিরকুশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন শামীম শেখ (৩৮), সিরাজ (৫০) এবং শাহিন মাঝি (৪০)। তাদের সবার বাড়ি নড়িয়ার ডিঙ্গা মানিক ইউনিয়নে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, খড়িসার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মাঝির পুকুরে মাছ ধরতে যান তারা। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
দেশে অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে বজ্রপাত। যে মৌসুমে বজ্রপাত কম হওয়ার কথা, সে মৌসুমেও বজ্রপাত বেড়েছে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন, গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, বজ্র নিরোধক দন্ড না থাকা গাছপালা কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাশই ঘটছে বাংলাদেশে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে দেশের হাওড় ও বিল অঞ্চলে। গত বছরের আগষ্টে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ২২৮ জন। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে ২৭ জন এবং অক্টোবরের ১১ তারিখ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮জন।
নিহতের এ সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগলিক অবস্থান। একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে আসছে গরম আর আর্দ্র বাতাস। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। কিছু দূরেই হিমালয় পর্বত। যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসে।
এ দুই জায়গা থেকে আসা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। তাছাড়া দিন দিন উচুঁ গাছপালা কমে যাওয়ায় আগের তুলনায় প্রাণহানি বাড়ছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে।
এরপর বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা ও সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল তাতে থামানো যায়নি। গ্রামাঞ্চলে বড় বড় গাছ কমে যাওয়ায় কৃষিতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও মুঠোফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি বজ্রপাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে মানুষের অসচেতনতাও রয়েছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে তালগাছ লাগানো একটা ভালো সমাধান। তবে এটা বেশ সময় সাপেক্ষ ও দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাপার।
প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও বাড়ানোর কথা এ ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে। বজ্রপাত যেহেতু প্রাকৃতিক এটা হবেই, তবে কম অথবা বেশি। বজ্রপাত রোধে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।