ভয়ঙ্কর গ্যাস সিলিন্ডার

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৩:৩৫ রাত
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৩:৩৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের খবর গণমাধ্যমে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধরনের বিস্ফোরণ জনিত দুর্ঘটনা অহরহই ঘটছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট এ পরিস্থিতি এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।

যদিও গ্যাস ছাড়া এখন নাগরিক জীবন কল্পনা করা যায় না। গ্যাসের সাময়িক সংকট দেখা দিলে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। একই ভাবে যানবাহনেও গ্যাসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, সিএনজি স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখলেই তা কিছুটা অনুমান করা যায়। পাশাপাশি গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহার ও ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

রাজধানীর মুগদা এলাকায় একটি সিএনজি পাম্পে বিস্ফোরণের ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন তালুকদার (৩৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি ট্রাক চালকের সহকারী ছিলেন। গত মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে বেস্ট ইস্টার্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশন পাম্পে এ দুর্ঘটনা ঘটে। উক্ত পাম্পে গ্যাস নেওয়ার জন্য ট্রাকটি থামে। এ সময় ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে।

বিস্ফোরণে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদ্দামের শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ট্রাকের সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ বা গ্যাস ওভার লোড হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এর আগে ১২ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি চলন্ত মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারী সহ চারজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবু বকর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পত্র-পত্রিকার খবরে জানা গেল সড়ক-মহাসড়কে সিএনজি চালিত যানবাহনগুলোর প্রায় ৫ লাখ গ্যাস সিলিন্ডার ভয়ঙ্কর অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে দেশে রূপান্তরিত ও আমদানিকৃত মিলিয়ে ৫ লক্ষাধিক যানবাহন সিএনজিতে চলছে। এসব যানবাহনে ১ থেকে ৪টি পর্যন্ত সিলিন্ডার সংযোজিত রয়েছে। সে হিসাবে ৬ লাখের বেশি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চলছে যানবাহনগুলো দেশের সিএনজি খাত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পালি লি: (আরপিজিসিএল) এর আগস্ট পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে জানা গেছে, গত ২২ বছরে (২০১৯ পর্যন্ত) মাত্র ৯৩ হাজার ১৮১টি সিলিন্ডার পুন: পরীক্ষা করা হয়েছে।

পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছে ৫ লাখের বেশি যানবাহন। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ি বিধ্বস্তের পাশাপাশি মূল্যবান প্রাণহানিও ঘটছে। সরকারি হিসাবে সিএনজি চালিত যানবাহনের কারণে মাসে প্রায় ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হলেও ব্যবহারকারীদের অসচেতনতার কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে না। সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩ হাজার ২০০ পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তায় চলা একেকটি গাড়ি যেন চলমান বোমা হয়ে ওঠে।

গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাস ও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডার যথাযথ না হলে বড় রকমের অঘটনাও প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিছু আরপিজিসিএলসহ সরকারের নানা প্রচেষ্টার পরও সিএনজি চালিত গাড়ির মালিক-চালকরা সিলিন্ডার রি-টেস্টে আগ্রহী হচ্ছেন না।

ফলে রিটেস্টের বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক গ্যাস সিলিন্ডার সড়কের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সবাই যাতে নিয়ম মেনে চলে বা চলতে বাধ্য হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গাড়িতে সিলিন্ডার পুন:পরীক্ষার স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়িতে গ্যাস দেওয়া হবেনা, এ রকম নিয়ম থাকলে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য মতে (২০১৯ সাল) গত এক দশকে সারা দেশে গ্যাস বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। আমরা চাই, গ্যাসের ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়