২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তার হাতে ক্ষমতা না ছেড়ে ২৫ মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনের অভিযান শুরু করে।
ঢাকা শহরে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ৭ মার্চের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্পষ্টতই ঘোষণা করেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তিযুদ্ধ।
সেই সঙ্গে চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালি নিধন অভিযানও। তাদের সঙ্গে হাত মেলায় তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর আল শামস সহ বিভিন্ন নামের বাহিনী, যাদের অত্যাচার-নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসের সব বর্বরতাকে হার মানায়। কিন্তু সারা দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তারা টিকতে পারেনি। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।
আমরা এই মহান দিনটিতে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহকর্মী স্বাধীনতা যুদ্ধে সফল নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নেতাদের। আজকের এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তাদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মুুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী সব ব্যক্তিকে।
আমরা আশা করি, যে চেতনা নিয়ে একদিন কৃষকের সন্তান অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, শ্রমিক কারখানার হাতুড়ি ছেড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙ্কারে অমিত বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ছেড়ে ছিলেন ক্যাম্পাস, নারী সমাজ সামলেছিল ঘর ও বাইরের চ্যালেঞ্জ এবং বুদ্ধিজীবীরা অসির বিরুদ্ধে মসিকেই সংগ্রামের হাতিয়ার বানিয়েছিলেন- তা এই স্বাধীনতা দিবসের মধ্য দিয়ে আরও শাণিত হবে।
এ দর্শন বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত যে, স্বাধীনতা মানে কেবলই রাজনৈতিক পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হওয়া নয়। নতুন মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার গৌরবেও তা সীমাবদ্ধ থাকে না। স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক পরিবেশে শ্রেণী-পেশা- ধর্ম নির্বিশেষে সবার আরও ভালো থাকার নিশ্চিত অধিকার। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। মুক্তির সংগ্রামে বিজয়ী হওয়াই নবতর প্রেক্ষাপটের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে, তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ-কলংক মুছে গেছে।
দেশে আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং সাজা হচ্ছে। দেশ ক্রমে এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। দেশ আজ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আরো অনেক খাতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে অবাক চোখে দেখছে বিশ্ব।
পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিশাল সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জাতি আজ ৫৩তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে। আজকের বাংলাদেশে নতুন প্রজন্ম বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে বিশ্বের বুকে প্রগতি, অর্থনীতি, সমৃদ্ধির সোপানে আরোহন করা এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের।
তাহলেই যে চেতনা নিয়ে একাত্তরে বাংলায় মানুষ অস্ত্র ধরেছিলেন, সে চেতনার মর্ম ছড়িয়ে পড়বে সবখানে।
সব বিভেদ ভুলে জাতীয় উন্নয়নের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো-এটাই প্রত্যাশা সবার।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা করতোয়ার সব পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ীদের বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।