এক্সপ্রেসওয়েতে মৃত্যুর বিভীষিকা

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৩:১৮ রাত
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৩:১৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সড়কে প্রাণ ঝরছেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, একই সঙ্গে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের এবং ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৯ জনই গোপালগঞ্জের।

এ ছাড়া খুলনার চারজন বাকিরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানান, রোববার ভোর ৪টার দিকে খুলনার ফুলতলা থেকে বাসটি ছাড়ে। পরে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়।

বাসটি চালক সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি রেলিং ভেঙে উল্টো যেয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক শিপলু আহমেদ জানান, দুর্ঘটনা জনিত ইমাদ পরিবহণের যাত্রীবাহী বাসটিতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী ছিল।

এমনকি ইঞ্জিন কাভারটি যাত্রীতে ভরা ছিল। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি ৫৪ আসন বিশিষ্ট একটি বাস ছিল। প্রতিটি আসন ও সামনের ইঞ্জিনের কাভারের যাত্রী মিলিয়ে বাসটিতে কমপক্ষে ৬০ জন ছিলেন। এর মধ্যে যারা সামনের দিকে বসেছিলেন তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো: মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত গতি ও সামনের ডান পাশের ঢাকা ফেটে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নি:স্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত অবৈধ চালক ও চালকের অসতর্কতা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তেমন ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, পথচারীদের অসতর্কতাও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত, মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, সড়কপথের ওপর চাপ কমানো ‘সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের সঙ্গে আমরা বলতে চাই, দুর্ঘটনারোধে উদ্যোগগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

আমাদের সতর্কতা অবলম্বন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। সরকারের পাশাপাশি পরিবহণ মালিক, শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বাড়ানো কোনো অসম্ভব কাজ নয়। ঝুঁকিপূর্ণ সব চালক ও গাড়ি উচ্ছেদ করা গেলে, সড়কে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত হলে, আইনের প্রয়োগ কঠোর হলে সড়কে নৈরাজ্য কমে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়