ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধন দুই বন্ধু প্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। গত শনিবার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন।
এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৪০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ভূখন্ডে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার প্রসারিত।
পাইপলাইনটির হাইস্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন টন (এমএমটিপিও)। এটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় হাইস্পিড ডিজেল সরবরাহ করবে। বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ এ পাইপলাইনে ৪৭ লাখ লিটার বা চার হাজার ৭০০ টন তেল সব সময় সংরক্ষিত থাকবে। শিলিগুড়ি প্রান্ত থেকে নতুন তেল দিয়ে চাপ দিলেই পার্বতীপুর প্রান্তে পাইপের তেল ডিপোতে জমা হবে।
কত তেল এলো সেটি মিটারে হিসাব করা হবে। পার্বতীপুরে আগে থেকেই বিপিসির ১৫ হাজার টন তেল মজুদ করার মতো ট্যাংকার রয়েছে। নতুন করে সেখানে আরও ছয়টি ট্যাংকার নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ধারণ ক্ষমতা ২৯ হাজার টন। ২০২০ সালের মার্চে এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড মহামারির কারণে কাজ এক বছর পিছিয়ে যায়।
১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন এর মাধ্যমে ভারতে লুমানিগড় থেকে শিলিগুড়ি হয়ে দেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে সরাসরি ডিজেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। দেশের উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি সংকট নিরসন হবে। জ্বালানির অভাবে সেখানকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হতো। এখন আর সেটা হবে না। এছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি ডিপোতে ডিজেল মজুদ হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ।
টেস্ট করে মানসম্পন্ন ডিজেল নেওয়া হবে। আগে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির পর পার্বতীপুরে নিতে যত টাকা পরিবহন খরচ হতো এখন সে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। আগে পরিবহনে ১২ থেকে ১৫ দিন লাগলেও এখন ৩ দিনে তা সম্ভব হবে। আগে রেলপথে ভারত থেকে তেল আনা হতো বাংলাদেশে।
ভারতীয় কোম্পানির অর্থায়নেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম তিন বছরে বার্ষিক ২ লাখ টন করে, পরের তিন বছর ৩ লাখ টন করে, পরের চার বছর ৫ লাখ টন করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ১০ লাখ টন করে জ্বালানি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে। পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয় নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুর ১৫০ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে।
এখন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে তেলটা আমরা আনছি সেটার প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ছে প্রায় ১১ ডলার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে আমাদের খরচ পড়বে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। তার মানে আমরা প্রায় ছয় ডলারের মতো প্রিমিয়াম বাবদ সাশ্রয় করব। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক এবং বন্ধুত্ব অটুট থাকুক এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।