পবিত্র রমজান মাস আসার আগেই নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর এই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার প্রতি বছর নানা রকম অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। কিন্তু বরাবরই দেখা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে না। রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব ভোগ্য পণ্যের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে তার মধ্যে অন্যতম ছোলা, ডাল, খেজুর, ভোজ্য তেল, চিনি ও আটা। যার বেশির ভাগই আমদানি নির্ভর।
কিন্তু চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
রমজান ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেললেও সেভাবে নিত্য পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এ জন্য দায়ী ডলার সংকট। ব্যবসায়ীদের অনেকে বেশি দামে পণ্য বিদেশ থেকে কিনে এনে ‘মুনাফা খোর’ এমন সমালোচনায় বিদ্ধ হতে চাচ্ছেন না। ফলে রমজান সামনে রেখে নিত্য পণ্যের আমদানি গতি পাচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহজনিত সংকট রয়েছে।
ডিমের হালি ৪৪-৪৬ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ টাকার ওপর। গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি। মাছের দামও চড়া। চিনি, আটা ও ময়দার কথা তো বলাই বাহুল্য। চালের দাম কমেনি ভরা মৌসুমেও। গরম শুরুর পর শাক সব্জির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। এটা সত্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ কমে যাওয়া এবং ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার।
এটি আগামী দিনে আরও বাড়বে। একদিকে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে এবং অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার। খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ায় লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাবে। বাড়বে ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা- যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করবে।
আমদানি পণ্যের পাশাপাশি দেশের উৎপাদিত অতি প্রয়োজনীয় এসব আমিষ পণ্যের চড়া দামে রীতিমতো অসহায় সাধারণ মানুষ। কোনোভাবেই এই ব্যয় মেটাতে পারছে না তারা। এদিকে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানিকৃত পণ্যের দাম চড়া থাকতে পারে কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কেন এতটা বাড়বে প্রশ্ন তাদের।
গত পনের দিনে কী এমন হয়েছে যে ব্রয়লারের কেজিতে ১০০ টাকা বাড়ানো হলো। এর যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে অথচ কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
বিগত বছরে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আদৌ কোনো সমন্বয় না থাকা। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। সিন্ডিকেট তথা মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্র বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
আসন্ন রোজার আগেই সব ধরনের নিত্য পণ্যের ন্যায্য মূল্য ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাই বলব, বিগত দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পবিত্র রমজানে মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যের যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। মূল্যস্ফীতির জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ যে কষ্টে আছে, তার প্রতিফলন ঘটছে প্রতিদিনকার সংবাদপত্রের পাতায় চোখ মেললেই।
ব্যবসায়ীরা যাতে লাগামহীন দাম বৃদ্ধি করতে না পারেন এ জন্য অবশ্যই বাজারে নিয়মিত নজরদারি করতে হবে এবং অন্যায্য ভাবে কোনো ভোগ্য পণ্যের দাম যেন বৃদ্ধি না হয়। তাহলেই নিত্য পণ্যের উচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজে করা যাবে। বর্তমান বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জরুরি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।