রাজধানীর ভাটারায় রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন আব্দুল মজিদ শিকদার (৭২) ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৪৮)। গত বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায় ভাটারার ১০০ফিট সাইটনগর এলাকার নিজস্ব ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন ওই দম্পতি। ভোরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গিয়েছিলেন। গ্যাসের সিলিন্ডার সম্ভবত লিকেজ ছিল। চুলা জ্বালানোর সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে আব্দুল মজিদ শিকদার দগ্ধ হন।
এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে তাসলিমা বেগমও দগ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যু যেন কোনোভাবেই এদেশের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। গৃহস্থালি যানবাহন ও বাণিজ্যিকে গত কয়েক বছরে দেশে সকল প্রকার গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাজারে সব কোম্পানি মান বজায় না রাখায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য মতে, গত এক দশকে সারা দেশে গ্যাস বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। বিস্ফোরক পরিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ব্যবহারকারীর অসচেতনতায় বেশির ভাগ সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে। সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা নিম্নমানের হোস পাইপ, রেগুলেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। গ্যাস ছাড়া এখন নাগরিক জীবন কল্পনা করা যায় না। গ্যাসের সাময়িক সংকট দেখা দিলে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। মানুষ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে।
একই ভাবে যানবাহনের গ্যাসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখলেই তা কিছুটা অনুমান করা যায়। পাশাপাশি গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহারও ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার সারা দুনিয়ায়ই রয়েছে।
উন্নত দেশগুলোতে মাথাপিছু গ্যাসের ব্যবহার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু দুর্ঘটনার হার খুবই কম। তার কারণ সেসব দেশে গ্যাস ব্যবহারের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং সেই নীতিমালা যাতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় তদারকি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুল্লার পশ্চিমতুল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মসজিদে এশার নামাজের পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের ভেতরে থাকা অর্ধ শতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও এসি বিস্ফোরণে অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের সমস্যা হলো কোনো ঘটনা ঘটলে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। ফলে তদন্ত কমিটির প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
গ্যাস লাইন ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের যে কোনো ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। ফলে সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্ক ও সচেতন থাকার বিকল্প থাকতে পারে না। এ ছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাস লাইনের ছিদ্র থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়াসহ নানাভাবে দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। মনে রাখা দরকার, ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে নজর থাকতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতাবোধই পারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা করতে।
পাঁচ বছর পর পর ফের সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও প্রায় কেউই তা করে না। এ সব ক্ষেত্রে সবাই যাতে নিয়ম মেনে চলে বা চলতে বাধ্য হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সিলিন্ডার পুন: পরীক্ষার স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার, এসিসহ দুর্ঘটনা প্রবণ সব বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ান সহ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের গভীর ভাবে মনোযোগ দিতে হবে। মানুষ অকালে প্রাণ হারাক এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা চাই, গ্যাসের ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।