পুলিশের চোখে স্প্রে ছুড়ে রাজধানীর আদালতপাড়া থেকে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সহযোগিরা। গত রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এর পরপরই সারা দেশে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে জঙ্গি ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের (সিজিএম) ফটকে।
পুলিশের ওপর হামলা ও পিপার স্প্রে জুড়ে মৃত্যুদন্ডের দুই জঙ্গিকে একটি মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় সহযোগিরা। তাদের একজন আনসার আল ইসলামের মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, অন্যজন আবু সিদ্দিক সোহেল।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, জঙ্গিদের পরিকল্পিত এই ছিনতাইকান্ডে অংশ নিয়েছিল ১০ থেকে ১২ সহযোগী। আদালত চত্বরে অনেকটা সিনেমাটিক চড়ে জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে তারা সময় নিয়েছিল ৫ থেকে ৬ মিনিট। জনাকীর্ণ আদালত চত্বর এলাকায় সবার সামনে দুর্ধর্ষ এই অপারেশন চালায় জঙ্গিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চার জঙ্গিকে এক পুলিশ কনস্টেবল ট্রাইবুনালে নিয়ে যান। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ট্রাইবুনাল থেকে হাজতখানায় ফেরানোর সময় একইভাবে আনা হয়।
সাধারণত দুই আসামিকে একটি হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালে প্রিজন ভ্যানে জেএমবির হামলার পর দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি, রোববার জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পর আদালত এলাকায় নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি আবার সামনে এলো। অনেকে বলছেন, পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগ এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেননা।
জানা গেছে, জঙ্গিদের হামলায় এক পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
২০১৭ সালেও প্রায় অভিন্ন কৌশলে গাজীপুরে প্রিজন ভ্যান হতে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। এত সত্ত্বেও জঙ্গিদের আদালতে কিংবা হাজতে নেওয়ার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাড়তি সতর্কতার অনুপস্থিতির হেতু কী অস্বীকার করা যাবে না, জঙ্গিদের এবার যে কৌশলে ছিনতাই করা হয়েছে, তা সাধারণ অঘটনাগুলির সাথে তুল্য নয়। কিংবা এটাও স্পষ্ট, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কঠোরতা থাকলে সহযোগীরা ওই তল্লাটেই লোকারন্যে মিশে ওতপেতে থাকতে পারতনা।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, পার্বত্যাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের আস্তানা ও প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা, ভিন্ন দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার অত্যাধুনিক অস্ত্র ক্রয়- এমন আরো অনেক তথ্যই উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিছুদিন ধরে পার্বত্য এলাকার কিছু স্থানে অভিযানও পরিচালনা করছে। বলা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে জঙ্গিরা দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।
এমন একটি সময়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা যে যথেষ্ট ছিল না। তা জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা থেকেই প্রমাণিত হয়েছে।
আমরা আশা করি যে কোনো মূল্যে পলাতক জঙ্গিদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এ ব্যাপারে সরকারকে ভবিষ্যতে আরো কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।