শিক্ষার্থীর মা’কে এক নারী বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করায় উত্তাল (ভিডিও সহ)

ডিসির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৩:৪৩ রাত
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৬:০৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে এক নারী বিচারকের পা ধরে শিক্ষার্থীর মাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আজ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে তারা ঘটনার সম্মানজনক বিচারের দাবিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই দফা সড়ক অবরোধ এবং স্কুলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকায় পরে জেলা প্রশাসক বগুড়া জেলা জজের সঙ্গে কথা বলে যখন জানান যে, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু হয়েছে তখন শিক্ষার্থীরা শান্ত হয় এবং রাত সোয়া ৯টার দিকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পালাক্রমে তাদের নিজেদের শ্রেণি কক্ষ ঝাড়ু দিতে হয়। ২০ মার্চ সোমবার অষ্টম শ্রেণির শ্রেণি কক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার দিন ছিল।

ওইদিন জারা নামে এক শিক্ষার্থীকে শ্রেণি কক্ষ ঝাড়ু দিতে বলা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মা জজ হওয়ায় (বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন) জারা শ্রেণি কক্ষ ঝাড়ু দিতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে জারার সঙ্গে সহপাঠীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওইদিন রাতে জারা স্কুলের একটি ফেসবুক গ্রুপে ঝাড়ু দেওয়ার বিষয় নিয়ে আপত্তিকর কিছু কথা লিখে পোস্ট দেয়। তার পর সেই পোস্টের নিচে তার সহপাঠীসহ অন্যরা জারাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে পাল্টা লিখতে শুরু করে।

ওই ঘটনার পর সেই নারী বিচারক আজ মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে ফেসবুক গ্রুপে তাকে এবং তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে অসম্মানজক কথা লেখায় শিক্ষকদের মাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফেসবুক গ্রুপে বিচারক এবং তার মেয়েকে নিয়ে অসম্মানজক কথা লেখার কারণে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

বিচারক এবং তার মেয়েকে নিয়ে ফেসবুক গ্রুপে অসম্মানজনক লেখা ঠিক হয়নি উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানান, এক মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং বেলা আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে।

তাদের অবরোধের কারণে আজ মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত অভিভাবক সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে হয়। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে অবরোধ চলার পর খবর পেয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াছমিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ওই ঘটনার সম্মানজক সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আলোচনায় বসার কথা বলে তাদের বিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান।

এরপর তিনি বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। এ সময় মিলনায়তনের ভেতরে শিক্ষকদের কয়েকজন অভিভাবক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী উপস্থিত ছিলেন। তবে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সেখানে সেই নারী বিচারকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানায়।  তবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেই দাবি আদায় না হওয়ায় তারা আবারও বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে।

পরে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা আক্তার ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবারও বিদ্যালয় মিলনায়তনে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের এবং তাদের অভিভাকদের বিরুদ্ধে যেন ভবিষ্যতে আইসিটি আইনে কোন মামলা না দেওয়া হয় এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও যেন তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয় সেটি নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

এ সময় জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, আজকের ঘটনার জন্য শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। তিনি ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কিন্তু তার পরেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকলে এক পর্যায়ে তিনি জেলা জজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।

এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন ‘তোমাদের বিষয়টা আমি ডিস্ট্রিক্ট জজকে জানিয়েছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। যে বিচারকের সঙ্গে একটি ইনসিডেন্ট ঘটেছিল। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট জেনেছে আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা অলরেডি চালু হয়ে গেছে।

জেলা জজ সাহেব তোমাদেরকে এই মেসেজটি দিতে বলেছেন।’ তার পর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই স্কুলের হেড মিস্ট্রেটসহ কোন টিচার যদি অন্যায়ভাবে  কোন ছাত্রীর বা কোন অভিভাবকের সাথে অন্যায় কোন আচরণ করেন তাহলে সেটার ব্যাপারে আমাদের যে তদন্ত কমিটি আছে তারা সেটি চিহ্নিত করে বিধিমত ব্যবস্থা নিবেন।’ জেলা প্রশাসকের ওই বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের সাথে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়।

জেলা প্রশাসকের এই আলোচনাকালে অন্যান্যের মধ্যে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা খানম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীনও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনিয়র শিক্ষক  মোবাশ্বেরা বেগম  সাংবাদিকদের বলেন, " বিষয়টি এই রকম নয়। এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলা বাধে। এর পরে আজকে সকাল ১১ টার সময় ঐ বিচারক এসে কিছু শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকদের বলেন যে এই শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা কেন বলেছেন।

এই সব লিখলে আইসিটি নামের একটা মামলা হতে পারে সেটা কি তোমরা জানো? এমন সময় একজন শিক্ষার্থীর মা এসে বিচারকের পায়ে ধরে ক্ষমা চান।" তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক রাবেয়া খাতুন তার সামনে বিচারকের পা ধরে এক অভিভাবকের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়