চাঁপাইনবাবগঞ্জে কাঙ্খিত বৃষ্টিতে  আম ও বোরো চাষিদের মুখে হাসি

সরিষা চাষিদের কিছুটা দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ০২:০২ রাত
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩, ০২:০২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দীর্ঘদিনের টানা শুষ্ক আবহাওয়ার পর কাঙ্খিত মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। শীতল হয়েছে আবহাওয়া। গরম-গুমোট ভাব পুরোটায় কেটে গেছে। রাতে বৃষ্টির পর আজ সোমবার (২০ মার্চ) সকাল থেকে আকাশে মেঘ  রয়েছে। যদিও কয়েকবার সূর্য উঁকি দিয়েছে তবে আরও বৃষ্টি হতে পারে।

ঝড় ও শিল ছাড়া হালকা বাতাসের সাথে হালকা থেকে মাঝারি প্রায় ৮ ঘন্টার টানা বৃষ্টি আম ও  বোরো চাষী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তবে যেসব কৃষকের জমিতে এখনও সরিষা রয়েছে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টির পর সরিষা কাটতে কয়েক দিন বিলম্ব হবে। এছাড়া তেমন বড় ক্ষতি হবে না। চৈত্রের ক্ষরার শুরুতে এমন বৃষ্টি বিশেষ উপকার বয়ে আনবে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম ও বোরোর জন্য। উপকার হবে প্রায় সকল ফসলেরও। কারও ক্ষতি হবে না।

কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে, আজ সোমবার (২০ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় জেলায় গড়ে ২৯.৪ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০, শিবগঞ্জে ৩০, গোমস্তাপুরে ১০, বরেন্দ্রাঞ্চল নাচোলে ৪৫ ও ভোলাহাট উপজেলায় ২২ মি.মি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় সদরে ১ ও শিবগঞ্জে ২ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরও আগে গত ২৭ ডিসেম্বর জেলায় গড়ে ৫ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

এছাড়া জেলায় দীর্ঘদিন (জেলার সেচের দায়িত্বে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের-বিএমডিএ’র হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৯ মাস) বৃষ্টিহীন শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করেছে। কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে ৪ লক্ষাধিক টন আম উৎপাদন আশা করছে। সম্পূর্ণ অননুকুল আবহাওয়ায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল আসার পর এই প্রাক্কলণ করা হয়। এছাড়া জেলয় এবার ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

গত বছর যা ছিল ৫১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এবার ৪০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি বোরো ফলন ৪.১৮ টন হলেও এবার কৃষি বিভাগের আশা বেশি ফলনের। অপরদিকে, গত বছর জেলায় ২৪ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হলেও এবার ১০৮ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি সরিষার ফলন ১.৬২ টন হলেও এবার সরিষারও ফলন বেশি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, যে বৃষ্টি হয়েছে তা বিশেষ উপকার বয়ে আনবে আমের গুটি ও বোরোর জন্য। গুটি ঝরা কমবে। গুটির বোঁটা শক্ত হবে। গুটি দ্রুত বেড়ে উঠবে। বৃষ্টিতে গাছ ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়েছে। বৃষ্টিতে বোরোর সেচ সংকট কেটে যাবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়বে। গত কয়েকদিনে বারবার ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তা হয়নি। আগামী ২২ মার্চ পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

যদিও লঘুচাপের সংকেত রয়েছে তবে গত বৃহস্পতিবার থেকেই আবহাওয়া শীতল ও ভারী হওয়ায় জেলায় তেমন ঝড়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে না। সদর উপজেলার রামকৃষ্টপুর গ্রামের পেশাদার আমচাষী, পরিচর্ষাকারী ও বাগান ব্যবসায়ী, মন্টু মিয়া (৬০) বলেন, যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে আমের প্রচুর উপকার হবে। গত আমন মৌসুমে জেলায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এরপর আর তেমন বৃষ্টি হয়নি। কৃষকরা আমবাগানে সেচ দিচ্ছিলেন। তারা স্বস্তি পেলেন।

এই বৃষ্টি আমের জন্য স্প্রে’র চাইতেও বেশি কাজ করবে। তবে গুটি আরেকটু বড় হলে গাছে স্প্রে করতে হবে। যেটকু মেঘলা আবহাওয়া রয়েছে তাতে আমের কোন ক্ষতি হবে না বলেও জানান এই চাষি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়