অটোভ্যান বিক্রি করে ছেলের কোচিং করানো বাবাকে নতুন ভ্যান দিলেন পঞ্চগড়ের ডিসি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩, ০৮:২৫ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩, ০৮:২৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড়: দরিদ্র বাবার সন্তান মেহেদী হাসান ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ভর্তির জন্য কোন টাকা নেই তার কাছে। অবশেষে জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও এখন দুশ্চিন্তা পড়ালেখার খরচ চালানো নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে বাবা হামিদুল ইসলাম উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানটিও বিক্রি করে দিয়েছিল।

এখন অন্যের ভ্যান দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। এবার সন্তানের পড়ালেখার খরচ আর সংসার পরিচালনার জন্য হামিদুল ইসলামকে একটি নতুন ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান কিনে দিলেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম।

আজ বুধবার (১লা ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভ্যানটি প্রদানের সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও হামিদুলের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উপার্জনের অবলম্বনটি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হামিদুল ইসলাম।

মেহেদী হাসানের বাবা হামিদুল ইসলামের বাড়ি উপজেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায়। মাত্র দুই শতাংশের ভিটেমাটিতে স্ত্রী, এক কন্যা সন্তানসহ চারজনের সংসার। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও ছেলেমেয়ে দু’জনই মেধাবী।

শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং সন্তানদের লেখাপড়ায় আগ্রহ দেখে তিনিও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বড় মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু আর্থিক অনটন তার এই স্বপ্নে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। তবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসহ ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানের খরচ যোগানোর সহায়তার আশ্বাসে সাহস যুগিয়েছে হামিদুলের।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়ে টাকার অভাবে ভর্তির জন্য দিশেহারা ছিলাম।

এরপর স্থানীয় এক বন্ধুর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের গণশুনানিতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে গেলে তিনি আমাকে ভর্তির জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ডিসি স্যার আমার মত অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছেন। আমার মত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে ডিসি স্যারের এমন কাজের জন্য আমরা তার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

ভ্যান চালক হামিদুল ইসলাম বলেন, দুই ছেলে মেয়েই আমার ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়া ভাল ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলে ভাল ফলাফলের পর ভার্সিটি কোচিং করার খরচ যোগাতে আমি উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোভ্যানটি বিক্রি করে দেই। পরে একটি ভাড়ায় চালিত ভ্যান দিয়ে মালিককে ভাড়া পরিশোধ করে দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকায় আয় হতো।

এ দিয়ে দুই বেলা খাবারও হতো না। সন্তানের পড়ালেখার খরচ যোগাবো কিভাবে। ছেলেকে ভর্তির সহযোগিতা করার পর ডিসি স্যার আজ আমাকে একটি অটোভ্যান দিলেন। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তিনি আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ডিসি স্যারের এই সহযোগিতার কথা কখনো ভুলবো না।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বুধবার গণশুনানির দিনটি সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। এই দিন ভ্যানচালক হামিদুলের মত অনেকেই আসেন নানান সমস্যা নিয়ে। বিশেষ করে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী আসেন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ বই কেনার আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে আসেন অনেকেই। আমার চেষ্টা থাকে মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা এবং দুঃস্থদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসহ জেলা প্রশাসক শিক্ষা বৃত্তি থেকে এসব গরিব মেধাবী ও দুঃস্থদের আর্থিক সহায়তা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়