স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ায় হীরা জহরত নিয়ে শতবছর ধরে কবরে শুয়ে থাকা অনিন্দ্য সুন্দরী নারী রূপজান বিবি এই প্রজন্মের মানুষের কাছে ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে রয়েছে। বগুড়া শহরের আঞ্জুমান ই গোরস্থানের প্রথম গেট ধরে কয়েক কদম যাওয়ার পর সর্ব পূর্বে প্রাচীর ঘেষে শুয়ে আছে এই নারী।
অনিদ্য সুন্দরী এই নারীর কবরে স্বেত পাথরে লেখা রয়েছে, সংসারের প্রান্ত ভাগে লভিয়া জনম/ দীনবেশে ছিল উচ্চ প্রনয় বৈভবে। প্রেমিকের অশ্রুজলে গাথা এ সমাধি; /হে প্রথিক কৃপানেত্রে হেরিলে বারেক/ ধন্য হবে শান্তি পাবে অন্তিম শয়নে। স্বেত পাথরে ছোট্ট এই পংক্তি গুলো কার খেলা সেটা জানা না গেলেও বগুড়ার এক সময়ের অনিন্দ্য সুন্দরী রূপজান বিবির করবের শিয়রে লেখা আছে কথামালা গুলো। বুকের পাঁজরে জমানো ব্যাথার আকুলতা প্রকাশ এই কথামালা। প্রিয়তমা জন্য উৎসর্গিত হয়েছে।
অনিন্দ্য সুন্দরী রূপজান বিবি শুয়ে আছে বগুড়া আঞ্জুমান ই গোরস্থান, নামাজগড়ে সর্ব পূর্ব প্রাচীর ঘেষে মানব নির্মিত সুরক্ষিত এক কবরে। ইতিহাস বিশেষঞ্জদের মতে বৃটিশশাসনামলে বগুড়া রেল স্টেশনের দায়িত্বে আসেন এক ইংরেজ বাবু। ওই ইংরেজ বাবু বগুড়ায় তার কর্মজীবনে ভালোবাসেন বগুড়ার সেই সময়ের অনিন্দ্য সুন্দরী এক নারীকে। প্রায় ১শ ১০ বছর আগে রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের কুমারী কন্যকে ভালোবেশে বিয়ে করাটা ছিলো প্রায় অসম্ভব কিন্তু ইংরেজ বাবুর ভালোবাসার কাছে সব কিছু হার মানে। অবশেষে ইংরেজ পুরুষের সাথে বাঙালী ললনার বিয়ে হয়।
ভালোই চলছিলো তাদের দাম্পত্য জীবন। ইংরেজ বাবুর ভাগ্যাকাশ কালোমেঘ ঢেকে যায় ১৯১৫ সালের ১০ মার্চ । বগুড়ায় সে সময় ভালো হাসপাতাল না থাকায় সন্তান সম্ভাবা রুপজান বিবিকে বগুড়া থেকে নেওয়া হয় কলকাতায়। ১৯১৫ সালের ১০ মার্চ কলতায় বেদনাদায়ক মৃত্যু হয় রুপজান বিবির। মৃত্যুর পর তার লাশ কলকাতায় দাফন না করে বগুড়ায় আনেন তিনি। এর পর শহরের নামাজগড়স্থ গোরস্থানের পূর্বপাশে একখন্ড জমি কিনে তাকে কবর দেন। রূপজান বিবিকে কবর দেওয়ার সময় তার ব্যবহৃত সোনার গহনা, হীরা জহরত রূপজান বিবির কবরে রেখে দাফন করেন। এরপর তার নামে বগুড়ায় একটি দিঘী খনন করে রূপজানের নামে নাম করণ করেন। এরপর স্টেশন মাস্টারের আর দেখা পাওয়া যায়নি। তিনি বগুড়াবাসীর কাছে আমানত স্বরূপ তার স্মৃতি রেখে গেছেন। তার ভালোবাসার নির্দশন রেখে গেছেন বগুড়া বাসীর জন্য । রূপজানের শিয়রে দেওয়া স্বেতপাথরে ইংরেজবাবু রিস্টনজা লিখেছেন।
এখানে রয়েছেন রূপজান বিবি। যিনি ২৮ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১০ মার্চ মারা যান। বেদনাদায়ক অসুস্থতায় ভোগার পর কলকাতায় মারা তিনি যান। এ ব্যাপারে গোরস্থান কমিটিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম নয়ন জানান, এই কবর তারা সুরক্ষিত রেখেছেন। রং করবেন। এটি সংরক্ষনে প্রত্নতত ¡বিভাগের কাছে আবেদন জানানো হবে। বগুড়ার ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগরা জানান, তৎকালীন ইংরেজ রেল স্টেশন মাস্টারের ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সম্রাট শাজাহানের ভালোবাসার প্রতীক যদি তাজমহল হয় তবে ইংরেজ রেল স্টেশন মাস্টারের অমর কৃত্তি এই সুরক্ষিত কবর।
তিনি বলেন, ওই ইংরেজ রুপজান বিবির মৃত্যুর পর বগুড়া থেকে চলে যান। তিনি বগুড়ায় জমি কিনে রুপজানের নামে একটি দিঘী খনন করে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য সেই দিঘী আজ নেই। তিনি প্রত্নতত্ববিভাগের কাছে কবরটি সংরক্ষনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।