জয়পুরহাট জেলা ও কালাই প্রতিনিধি: বহুল আলোচিত জয়পুরহাটের কালাইয়ের কিডনির হাট আরও বিস্তৃতি হয়েছে। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে বিস্তৃত হয়ে এখন পাঁচবিবি উপজেলাতে চলছে কিডনি বেচাকেনা। জয়পুরহাট জেলা পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নজরদারিতে কিছু দিন ঝিমিয়ে পড়েছিল কালাই উপজেলার কিডনি বেচাকেনার হাট। তবে এখন আরও বিস্তৃত এই হাট। বর্তমানে নতুন নতুন দালালদের তৎপরতায় আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে কিডনি হাট। কিডনির হাট নতুন করে চাঙ্গা হয়েছে এই খবরে অভিযান শুরু করে জয়পুরহাট পুলিশ। জেলার কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে কিডনি বেচাকেনা দালাল চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো জেলার কালাই থানার মৃত মিরাজ উদ্দীনের ছেলে শাহারুল (৩১), উলিপুর গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে ফরহাদ হোসেন চপল (৩২), জয়পুর বহুতি গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দীনের ছেলে মোর্শারফ হোসেন (৫৪), একই গ্রামের মৃত মোবারকের ছেলে মোর্কারম (৫৪), ভেরেন্ডি গ্রামের জাহান আলমের ছেলে শাহারুল ইসলাম (৩৫), দূর্গাপুর গ্রামের মৃত বাহার উদ্দীন ফকিরের ছেলে সাইফুল ফকির (৪৫) ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার হানাইল বম্বু গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে বর্তমান পাঁচবিবি উপজেলার গোরনা আবাসিক এলাকার সাদ্দাম হোসেন (৪০)।
আজ শনিবার পুলিশ লাইন্স ড্রিলসেডে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা সংবাদ সম্মেলনে জানান, কিডনি বেচাকেনার এই দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্যরা গরিব পরিবারের লোকদের টার্গেট করে। তারপর তাদের অভাবের সুযোগ নিয়ে প্রথমে তাদের ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিয়ে থাকে। এর কিছুদিন পার হলে তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ি ওই টাকা ফেরত চায়। টাকা ফেরত দিতে না পারলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করতে ঋণগ্রস্তদের বাধ্য করে। পরবর্তীতে ওই দালাল চক্র তাদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে শারীরক পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে অসাধু চিকিৎসকের মাধ্যমে দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের কিডনি অপসারণ করে। এরপর তাদের এক থেকে দু’লাখ টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তিনি আরও জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কালাই এলাকা থেকে কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছন। কিডনি চক্রের দালাল কাওসার ও সাত্তারের মাধ্যমে নিখোঁজরা ভারত ও দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরহাটসহ পাশের বিভিন্ন এলাকার নিরীহ, ঋণগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষদের ফুসলিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করে আসছিল এবং বর্তমান তারা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাতে কালাই ও পাচঁবিবি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিডনি বেচাকেনার দালাল চক্রের সক্রিয় ৭ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
উল্লেখ্য, মানবদেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজন ১৯৯৯ অনুযায়ি ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি মামলা বিচারধীন ও একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ১৫টি মামলায় ১২১ জন আসামি। এরমধ্যে ৪৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৭৪ জন আসামি পলাতক রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফারজানা হোসেন, সদর সার্কেল মোসফেকুর রহমান, পাঁচবিবি সার্কেল ইশতিয়াক আলমসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।