জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের পরিকল্পিত লোডশেডিং শুরুর পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে রাজধানীতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও স্বস্তি নেই গ্রামে। সরবরাহ কম থাকায় বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশি লোডশেডিং করতে হয়। তবে ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ এলাকায় দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বৃষ্টির কারণে গতকাল সোমবার লোডশেডিং কিছুটা কম ছিল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দেশে গত ১৯ জুলাই এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হয়। ওই দিন দেশে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় ২ হাজার ৪২৬ মেগাওয়াট। একই দিন গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সর্বোচ্চ লোডশেডিং করেছে ১ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোয় দুই সপ্তাহ পর এসে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা কমেছে। পিডিবির হিসাবে, গতকাল দিনের বেলায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে ১ হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট। দুপুরের দিকে ঢাকা শহরে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) এলাকায় ঘাটতি বেড়ে যায়। গতকাল দুপুরে সর্বোচ্চ ২৩৫ মেগাওয়াট ঘাটতি পেয়েছে ডেসকো। ফলে কিছু এলাকায় এক ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর লোডশেডিং করতে হয়নি।
তবে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) গতকাল দুপুরে সর্বোচ্চ ঘাটতি পেয়েছে ১৩৫ মেগাওয়াট। বিকেল চারটার পর লোডশেডিং তুলে নেওয়া হয়েছে। ডেসকো ও ডিপিডিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, শহরের কিছু এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রাও কম ছিল। ফলে দুপুরের পর লোডশেডিং কমে যায়। বিকেল থেকে আর ছিল না।
দুই সপ্তাহের বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার কথা থাকলেও শুরু থেকেই তা মানা যায়নি। বরং অনেক গ্রামে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এক সপ্তাহ পর লোডশেডিংয়ের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানোর কথা থাকলেও তা এখনো জানানো হয়নি। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ঢাকার আশপাশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকায়। এর বাইরে ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার গ্রামে লোডশেডিং বেশি।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, পিডিবির করা বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের হিসাবের সঙ্গে তাদের তথ্যের মিল নেই। এতে করে প্রকৃত লোডশেডিং আরও বেশি হচ্ছে।
আরইবি সূত্র বলছে, গতকাল দিনের বেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ–ঘাটতি ছিল দুপুর ১২টার দিকে ১ হাজার ১৮৮ মেগাওয়াট। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঘাটতি কমে দাঁড়ায় ৮৬ মেগাওয়াটে। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে গ্রাম এলাকায়। দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গতকাল বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন।
জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলায় গতকাল তুলনামূলক কম লোডশেডিং হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দিনে ১৫ থেকে ২০ বার লোডশেডিং হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার কিংজাল্লা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই দিন ধরে বৃষ্টি। তবু সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত (গতকাল) তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। উপজেলার গাইবান্ধা এলাকার দুলন মিয়া বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয় থেকে সাতবার লোডশেডিং হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইসলামপুর উপজেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম রব্বানী বলেন, সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ মেগাওয়াটের সময় বরাদ্দ পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট। সেই সময় বেশি লোডশেডিং দেওয়া হয়।
রংপুরে গতকাল লোডশেডিং কম ছিল। দিনে নগরের এলাকাভেদে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। শহরের কেরানিপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শফিয়ার রহমান বলেন, দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুই দফায় আধা ঘণ্টা করে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।