ভিডিও রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:০৬ বিকাল

হেমন্তের ধান কাটা উৎসবের আড়ালে কৃষকের দীর্ঘশ্বাস

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। অত্যন্ত দু:খ-কষ্ট মাথায় নিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলায় অবহেলিত কৃষকরা। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে আছে যুগের পর যুগ। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে দুমুঠো অন্ন জোগায় ওই সব প্রান্তিক চাষীরা। প্রতিকুল আবহাওয়ার সাথে মোকাবিলা করে দিনের পর দিন তারা যা ফসল ফলায় তা দিয়ে তাদের সংসার খুব কষ্টে চলে। পর্যাপ্ত উপকরণ দিয়ে সব ধরনের ফসল ফলালেও বিনিময়ে লাভের পরিমাণ তেমন কিছু দেখতে পায় না। ফলে ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে। 

বাংলার কৃষি শুধুই চাষবাসের হিসাব নয়, এখানে মাটির গন্ধে জড়িয়ে আছে মানুষের বেঁচে থাকার গল্প, আবেগ আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা ঐতিহ্য। হেমন্ত এলেই সেই গল্পের আবেশ আরও ঘন হয়ে ওঠে। মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানের ঢেউ দেখে মনে হয়, বাংলা যেন আবার নিজের অস্তিত্বের স্বাদ ফিরে পেয়েছে। ধান কাটা তো কষ্টের কাজ, তবুও এটিকে আমরা বলি উৎসব। কারণ সেখানে আছে নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ, ফসলে ভরা উঠোন দেখার স্বস্তি। কিন্তু এই হাসির নীচেই লুকিয়ে থাকে এক স্তব্ধ বেদনা, যা কৃষকের চোখ ছাড়া খুব কম মানুষই টের পায়। যারা সারা বছর রোদ-বৃষ্টি সহ্য করে দাঁড় করান এই সোনালি স্বপ্ন,তাদের জীবনে আজ দুশ্চিন্তাই বড়। সার,কীটনাশক ও বীজের দাম বাড়ে, শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়, আর বাজারে গিয়ে ধানের দাম শুনলে বুকটাই কেঁপে ওঠে। অন্ন উৎপাদনকারী মানুষগুলোই যেন সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় দিন কাটায়।

 গ্রামবাংলার মাঠ এ সময় হাসি-আনন্দে জমজমাট থাকে ঠিকই, শিশুদের দৌড়ঝাঁপ, ধান গাদা করার ব্যস্ততা, কৃষাণীদের গল্পগুজব সবই যেন উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়,শুধু আবেগে কি আর জীবন চলে? কৃষকের ভাগ্যের উন্নতির পথটা কোথায়? যন্ত্র এসেছে, কাজ সহজ হয়েছে, কিন্তু সেই যন্ত্র কেনার সামর্থ্য ক’জনের? ফসল তোলার পর রাতে খাবার টেবিলে যখন নতুন চালের ভাতের সুগন্ধ ছড়ায়, ঠিক তখনই কোনো কৃষক হয়তো হিসাব কষছে, ঋণ কবে শোধ হবে! আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মাঠের ছবি দেখে মুগ্ধ হই, ভিডিও দেখে হাসি-ঠাট্টা করি, কিন্তু সেই ছবির আড়ালে থাকা সংগ্রামের গল্প কয়জন মনে রাখি? বাংলার অন্যতম প্রাচীন এই কৃষি-উৎসব এখনো অবহেলিত মানুষের ঘিরেই আবর্তিত। কৃষককে শুধু উৎসবের রঙিন পোস্টারে বন্দি করলে হবে না। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, কৃষি ঋণে সহজ শর্ত, কৃষিশ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, এসব বাস্তবায়নই পারে উৎসবকে সত্যিকারের আনন্দে পরিণত করতে। বাংলা ধানের দেশ, কৃষকের হাতেই আমাদের অন্নর শিকড়। তাই কৃষকের হাসি ফিরে আসাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি দায়বদ্ধতা। হেমন্তের এই ধান কাটা উৎসব আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ, সময় এসেছে, এই আনন্দ কৃষকের জীবনেও সমান উজ্জ্বল করে তোলার। 

লেখক 

আরও পড়ুন

বিএম মিকাইল হোসাইন

 পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হেমন্তের ধান কাটা উৎসবের আড়ালে কৃষকের দীর্ঘশ্বাস

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু সকাল সাড়ে ৭টায়, সময় বাড়লো ১ ঘণ্টা 

ব্লু ইকোনমি ও ইন্দো প্যাসিফিক রাজনীতি

জেলেনস্কিকে সরানোর পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র : ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

রীনা-কিরণ-গৌরীকে নিয়ে অকপট আমির খান

স্কালোনির কাছে ক্ষমা চাইলেন ফিফা সভাপতি