রংপুরের তারাগঞ্জে জোড়া খুন
শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়া মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির করুণ পরিণতি
রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় রাতের আঁধারে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায় (৬০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার দিবাগত গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে প্রথমে স্বামীকে এবং পরে স্ত্রীকে হত্যা করে। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিবেশীরা ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহ হলে মই বেয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ডাইনিং রুমে যোগেশ চন্দ্র রায়ের এবং রান্নাঘরে সুর্বণা রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী দীপক চন্দ্র রায় জানান, তার পরিবার প্রায় পাঁচ দশক ধরে নিহত যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। তিনি প্রতিদিন সকালে সেখানে কাজ করতে যান। রোববার সকালেও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাউকে বাইরে বের হতে না দেখে সন্দেহ হলে বহুবার ডাকাডাকি করা হয়। কোনো সাড়া না পেয়ে আশপাশের লোকজনকে ডেকে মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে ভয়াবহ এই চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন একজন সৎ ও জনপ্রিয় শিক্ষক। তিনি ২০১৭ সালে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার দুই ছেলে-বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় জয়পুরহাটে এবং ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশের দায়িত্বে কর্মরত। গ্রামের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুখ আহাম্মেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে একাধিক টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুনতারাগঞ্জ থানার এসআই আবু ছাইয়ুম বলেন, প্রাথমিক সুরতহালে দুজনের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার প্রকৃত কারণ বের করতে আমরা তদন্ত করছি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান জানান, বিজয়ের এই মাসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার নিরস্ত্র স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা চরম নৃশংসতা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, নইলে মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তারাগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত বলেন, নিহত মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। শনিবার রাতে যে কোনো সময় দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে ঘরে ঢুকে দুজনকেই জবাই করে হত্যা করেছে। নৃশংস এই জোড়া খুনের ঘটনায় পুরো উত্তর রহিমাপুর গ্রামে শোক ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকাণ্ড হওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন








