চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়ছে নদীর পানি অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত ১৩শ বিঘা জমির ফসল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান নদীগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধির গতি বেড়েছে। ফলে ভাঙনের কবলে পড়েছে কিছু এলাকা। সরিয়ে নিতে হচ্ছে ইউপি ভবন, একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বসতবাড়ি। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে জেলার প্রায় ১৩শ’ বিঘা জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াসিন আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার নাচোল, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলায় অতিবৃষ্টিতে রোপা-আমন, আউশ ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে নদীর পানি বৃদ্ধিজনিত ফসলের কোন ক্ষতির খবর এখনও জানা যায়নি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার পদ্মা, মহানন্দা ও পূর্ণভবা নদীর পানি বৃদ্ধির মূল কারণ উজানে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানি। এরসাথে জেলাতেও চলছে বৃষ্টিপাত। গত ১৩ জুলাই সকাল ৯টায় ভারত থেকে ফারাক্কা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর পদ্মার প্রথম পানি মাপা গেজ স্টেশন শিবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে পানির স্তর ছিল ১৭.৪৬ মিটার। আজ রোববার (২০ জুলাই) সকাল ৯টায় ওই পয়েন্টে পানির স্তর ছিল ১৯.৮৬ মিটার।
এই পয়েন্টে গত ৭দিনে পানি বেড়েছে ২.৪ মিটার (পৌনে ৮ ফুটের বেশি)। এদিকে পদ্মার বিপৎসীমা ২২.০৫ মিটার। জেলার অপর প্রধান নদী জেলার ভোলাহাট উপজেলা দিয়ে জেলার সকল (৫টি) উপজেলা ছুঁয়ে প্রায় শত কিলোমিটার বয়ে পদ্মায় পতিত হওয়া মহানন্দায় গত ১৩ জুলাই সকালে জেলা শহর ঘেঁষা খালঘাট পয়েন্টে পানির স্তর ছিল ১৪.৮৬ মিটার।
যা গত শনিবার সকালে ছিল ১৭.৬০ মিটার। এই পয়েন্টে ৭দিনে পানি বেড়েছে ২.৭৪ মিটার (প্রায় ৯ ফুট)। মহানন্দার বিপৎসীমা ২০.৫৫ মিটার। পূণর্ভবা নদীর জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর গেজ স্টেশনে গত ১৩ জুলাই সকালে পানির স্তর ছিল ১৪.৮৯ মিটার। যা গত শনিবার সকালে ছিল ১৭.৫৭ মিটার। ৭দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৬৮ মিটার (পৌনে ৯ ফুটেরও বেশি)। পূণর্ভবার বিপৎসীমা ২১.৫৫ মিটার।
আরও পড়ুনপাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম আহসান হাবীব বলেন, এবার একটুু আগেভাগেই জেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর হারও বেশি। ভারতের পদ্মা অববাহিকাসহ (গঙ্গা বেসিন) বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় জেলার নদীগুলোতে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৫দিন পানি বৃদ্ধির এই গতি অব্যাহত থাকবে। তবে জেলার সকল নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা সতর্কীকরণ এবং পূর্বাভাস কেন্দ্র দেশের প্রধান নদী পদ্মার সর্ব উজানের এই জেলায় এখনও বন্যার কোন সতর্কতা জারি করেনি।
প্রকৌশলী আহসান আরও বলেন, জেলার সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে মনোহরপুর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী নারায়রনপুর ইউনিয়নে ভাঙন চলছে। গত সপ্তাহে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন ও পাউবোকে অবহিত করা হয়েছে। ইউপি ভবন ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। একটি বাজারও সরিয়ে নিতে হতে পারে। দ্রুত আবারও পরদির্শন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ভাঙনে বিলীন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পদ্মার পানি বাড়ায় ভাঙন তীব্রতর হয়েছে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডে। ১নং ওয়ার্ডে ইউপি ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। শান্তিনগর নামে একটি হাটও সরিয়ে নিতে হবে। এসব স্থাপনার কাছে পানি চলে এসেছে। এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে থাকা ইউনিয়নের প্রায় একশ’ বসতবাড়ি ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাউবো এখনও ইউনিয়নে কোন কাজ শুরু করেনি।
ফারাক্কা দিয়ে পদ্মা বাংলাদেশে প্রবেশের পর সবথেকে নিকটবর্তী শিবগঞ্জের পাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, দ্রুত পদ্মার পানি বাড়ছে। তবে এখনও কোন ফসলের ক্ষতি হয়নি বা স্থাপনা সরিয়ে নিতে হয়নি। অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। শিবগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌফিক আজিজ বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পানি এবার আগেভাগেই বাড়ছে। মনোহরপুরে ভাঙন ছাড়া এখনও তেমন কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন