ভিডিও শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

জিআই স্বীকৃতি থাকলেও বঞ্চিত টাঙ্গাইলের আনারস চাষিরা

জিআই স্বীকৃতি থাকলেও বঞ্চিত টাঙ্গাইলের আনারস চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলতি মৌসুমে বাজারে উঠেছে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী আনারস। তবে মৌসুমজুড়ে ২০০ কোটির বেশি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা থাকলেও চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভের বদলে বাড়ছে ক্ষতির হিসাব। জেলার গারোবাজারসহ বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন লাখ লাখ আনারস বিক্রি হলেও নেই প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সরকারি সহায়তার সুস্পষ্ট কাঠামো। ফলে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা, আর প্রান্তিক চাষিরা রয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত। 
ক্যালেন্ডার জাতের এই ঐতিহ্যবাহী ফল টাঙ্গাইলের গারোবাজার, জলছত্র ও মোটের বাজারসহ বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ পিস বিক্রি হচ্ছে। যা দৈনিক তিন কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা তৈরি করে। কিন্তু এই ব্যবসা শুধু কৃষক নয়, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাজারের শ্রমজীবী পর্যন্ত অনেকের আয়-রোজগারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। 
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের সুযোগ সীমিত। সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আয়ের অধিকাংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাজার মূল্য নির্ধারণে কৃষকের হাতে খুব কম অধিকার থাকায় লাভের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে পাইকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এবং মধুপুর উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত গারোবাজারের আনারস চাষি রফিক মিয়া বলেন, ‘সারের দাম দিয়ে যে আনারস চাষ করেছি, তা আনারসের দাম দিয়েও উঠতেছে না। যদিও দাম একটু বেশি, তাও লাভের মুখ দেখি না।
এ বিষয়ে জলছত্রের চাষি জালাল উদ্দিন দাবি করেন, ‘সারের দাম যদি কিছুটা কমানো যেত, তাহলে আনারস চাষ করা কিছুটা সহজ হতো। এখন সারের দাম আর আনারসের দাম মিলিয়ে কৃষকের পক্ষে লাভবান হওয়া কঠিন।
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর আনারসের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা। আগের বছর প্রতি পিস আনারস ১০ টাকা পিস বিক্রি হলেও এ বছর মান ও আকারভেদে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-৬০ টাকায়। প্রতিদিনই সারাদেশে সরবরাহ হচ্ছে এসব আনারস। যার মধ্যে সরবরাহ বেশি হচ্ছে ঢাকা ও সিলেটে। আবহাওয়ার উন্নতি হলে আনারসের সরবরাহ এবং দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। 
টাঙ্গাইল জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ জানান, সরকারিভাবে আনারস নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আনারসকে কেন্দ্র করে খাদ্যপণ্য উৎপাদন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে সিজনের ফল ঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়।
উল্লেখ্য যে, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখান থেকে বিপুল বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিআই স্বীকৃতি প্রাপ্ত আনারস আমাদের কৃষি ও ঐতিহ্যের অংশ। ফলে কৃষি ও অর্থনীতির সম্ভাবনাময় এই খাতে চাষি, বাজার ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারকদের যৌথ পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪৩২তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি

দিনাজপুর থেকে অপহৃত কিশোরী রংপুর থেকে উদ্ধার

বিশ্বনাথে চোলাই মদের আস্তানায় হানা, যুবকের কারাদণ্ড, জরিমানা

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘আলীপুর উপশাখা’ উদ্বোধন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা ইমানি দায়িত্ব : প্রিন্স