ভিডিও শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চিরকুটে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

বগুড়ায় নিখোঁজের পর শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার, রহস্যময় নারী আটক

বগুড়ায় নিখোঁজের পর শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার, নারী আটক

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়া থেকে মাহাদি হাসান নামে চার বছর বয়সী এক শিশুর বস্তায় ভরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়। শিশুটি একদিন আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা তাহমিনা খাতুন নামে এক নারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

সেইসাথে ওই নারীর ঘর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নিহত শিশু মাহাদি হাসান নিশিন্দারা ধমকপাড়ার হোটেল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ছেলে। এছাড়া আটক তাহমিনা খাতুন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রাম এলাকার আনিস মন্ডলের স্ত্রী। তবে সে নিশিন্দারা ধমকপড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

যেভাবে শিশুটি নিখোঁজ হয় : শিশু মাহাদির চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে মাহাদি নিখোঁজ হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে বাড়ির সামনে খেলতে দেখা যায় মাহাদিকে। খেলার এক ফাঁকে মাহাদি নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর থেকে পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে থাকে।

দিনভর তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে মাহদির বাবা শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ মাহাদির সন্ধান চেয়ে মাইকিং করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শিশুটির সন্ধান চেয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভোরে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়।

যেভাবে মাহাদির লাশ উদ্ধার হলো : শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে মাহাদিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দিনভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি মাহাদিকে। সন্ধ্যার দিকে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। রাতদিন পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ-খবর করতে থাকেন। আজ শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে স্থানীয়রা তহমিনার রান্না ঘরের পেছনে একটি বস্তায় ভরা মাহাদির লাশ দেখতে পান।

তহমিনার ভাড়া বাসার রান্নাঘরের চুলা সংলগ্ন টিনের পাশে বস্তায় ভরা মাহাদির লাশ পাওয়া যায়। এরপর খবর পেয়ে সকাল ৮ টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় এবং তহমিনাকে আটক করে। শিশুটির চাচা জাহিদুল আরও জানান, তারা তথ্য পেয়েছেন যে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। এরপর বিস্কুটের সাথে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে শিশুটাকে অজ্ঞান করা হয় বলেও তিনি বলেন।

মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা চেয়ে চিরকুট : লাশ উদ্ধারের সময় তহমিনার ঘর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। স্থানীয় জনতা তার ঘর তল্লাশি করে চিরকুটটি উদ্ধার করে। এতে লেখা রয়েছে ‘তোমার সন্তানকে ভালোভাবে দেখতে হলে গলির মধ্যে ৫ লাখ টাকা রেখে যাও।’ প্রতিবেশীরা তার ঘর তল্লাশি করে এই চিরকুট উদ্ধার করে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

বিক্ষুব্ধ জনতা তহমিনা আটক তাকে মারপিট করে। পরে পুলিশ আসলে জনতা তহমিনাকে সোপর্দ করে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে সদর থানায় আনা হয়। চিরকুটটি পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে।

যেভাবে আটক হলো তহমিনা : মাহাদির লাশ উদ্ধারের সময় প্রতিবেশি তহমিনা রহস্যময় আচরণ করে। এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। এভাবে সে পালানোর চেষ্টা করতে থাকে। সেইসাথে তার বাড়ির পেছনের দরজা খোলা দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। জনতার চোখ সে এড়াতে পারেনি। জনতা তাকে ধরে ফেলে এবং উত্তম- মধ্যম দেয়। কিন্তু ধূর্ত তহমিনা গণ ধোলাই খেয়েও মুখ খোলেনি। পরে পুলিশ এলে জনতা তাকে সোপর্দ করে।

মাহাদিকে অপহরণ করতে বাড়ি ভাড়া : স্থানীয় লোকজন জানান, অপহরণকারী তাহমিনা খাতুন মাস তিনেক আগে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় এসে শিশু মাহাদির বাড়ির পাশে ঘর ভাড়া নেয়। মাহাদির বাবা শফিকুল ইসলামের বগুড়া চার মাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় হোটেল রয়েছে। তাহমিনা ওই হোটেলে রান্নার তরকারি কাটা-বাছার কাজ করেছে।

সে এই কাজ করার সুবাদে শিশু মাহাদির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। ভাব জমিয়ে ফেলে শিশুটির সাথে। সে শিশুটিকে মাঝে মধ্যে আদর করতো এবং চকলেট, বিস্কুট ও আইসক্রিম কিনে দিত। এইভাবে ভাব জমিয়ে শিশুটিকে কৌশলে অপহরণ করে লুকিয়ে রেখেছিল তহমিনা। মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চিরকুটও লিখে রেখেছিল তহমিনা। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শিশুটি হত্যা করা হয় বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা।

আরও পড়ুন

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল : পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তহমিনা শিশুটির হাত ধরে চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছে।

আবার কিছুক্ষণ পর ওই পথ ধরেই মাহাদিসহ তাকে বাসার দিকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। এরপর রাতে পুলিশ তহমিনাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু সে মুখ খোলেনি। শুধু এটুকু বলেছে সে, মাহাদিকে চারমাথা থেকে ফিরিয়ে এনে তার নানীর কাছে দিয়েছে। 

জনতার ক্ষোভ : বগুড়া উপশহর ফাঁড়ির ইনচার্জ জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শিশু মাহাদির হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওই নারীর বাড়িতে চড়াও হয়। পরে জাতীয় জরুরী সেবা ট্রিপল নাইন (999) নাম্বারে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার করতোয়া’কে বলেন, ‘ট্রিপল নাইনে (999) ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তিনি জানান, ‘কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ হত্যার ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ছাড়া তহমিনার ঘর থেকে একটি মুক্তিপণ আদায়ের চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের কথা উল্লেখ আছে। মাহাদির বড়ভাই করতোয়া’কে জানান, বাসার পাশের মুদির দোকানে ১০ টাকা হাতে নিয়ে আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিল শিশু মাহাদি। এর কিছুক্ষণ পর আবারও মোবাইল ফোনের এমবি কার্ড কিনতে আবারও সেই দোকানে যায় শিশুটি। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয় সে। তবে এই টাকা তাকে কে দিয়েছিলো এই সম্পর্কে এখনো কিছু জানেন না তারা।

বিলাপ ও আহাজারি : নিহত মাহাদি হাসানের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরণ হয়। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার মা রুবি বেগমের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বার বার মুর্ছা যান। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত লোকজন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

এছাড়া তার বাবা শফিকুল ইসলাম বিলাপ করতে করতে  বার বার বলতে থাকেন আমার ৪ বছরের মাহাদি কি দোষ করেছিল। তাকে এভাবে কেন মারতে হবে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। এদিকে শিশু মাহাদি হত্যার খবর পেয়ে হাজারো মানুষ মাহাদির বাড়িতে ছুটে আসে। শিশুটির লাশ এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে।

জনতা ওই নারী তহমিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তার ফাঁসি দাবি করেন। বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে। তহমিনার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামে। তিনি দ্বিতীয় স্বামী আলিফের সঙ্গে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

সর্বশেষ অবস্থা : বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম মঈন উদ্দীন করতোয়া’কে বলেন, জনতা তহমিনা উত্তম-মধ্যম দেয়ায় সে আহত হয়। এরপর তাকে ওই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে সে আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮ টা পর্যন্ত মুখ খোলেনি। তবে এ  অপরহরণ ও হত্যার ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার সকালে তহমিনাকে আদালতে হাজির করা হবে। তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির লাশ তার পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের পর তার লাশ দাফনও করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে কমেছে বাংলাদেশি রোগী, হাসপাতাল ব্যবসায় ব্যাপক ধস

নোয়াখালীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

টানা দুই হারে সিরিজ হাতছাড়া নারীদের

ধানক্ষেত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ‍নিকৃষ্ট যে ব্যক্তি

‘সিজেএফবি’ পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হচ্ছেন নাঈম-শান্তা