ভিডিও শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা, ছবি : দৈনিক করতোয়া

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়ও সূচিত হয়েছে পরিবর্তনের ধারা। আর এ পরিবর্তন প্রভাব বিস্তার করছে আমাদের রুচির ওপর। প্রদর্শন প্রভাব কার্যকরী হওয়ায় আমরা অনুসরণ করছি একে অন্যকে। তাই তো নামীদামী মোটরসাইকেল হয়ে উঠেছে এখন সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম নির্ণায়ক। সময় ও অর্থ বাঁচানোর পাশাপাশি ভ্রমণেও এর জুড়ি নেই। বলাবাহুল্য যে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহন।

অথচ দশক তিনেক আগেও স্বল্পসংখ্যক বিত্তবান মানুষের হাতে ছিল মোটরসাইকেল। সময়ের পরিক্রমায় মানুষের আয় সাথে পরিবর্তন হয়েছে রুচিরও। অর্থাভাবে আগে যারা বাইসাইকেলও কিনতে হিমসিম খেতেন, আয়ের পরিবর্তনে তাদের হাতেও এখন নামীদামী মোটরসাইকেল। যৌতুকের অংশও এখন এটি।

বিভিন্ন ব্রান্ড ও মডেলের বাইক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বাইক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার। পরিণাম ভালো নয় জেনেও অনেক অভিভাবক চেতন কিংবা অবচেতন মনে তুলে দিচ্ছেন প্রিয় সন্তানটির হাতে দানবরূপী বাইক। দেখা যায়, ১৩-১৭ বছরের কিশোর সন্তানটির হাতে বাইক দিয়ে পিছনে বসে যেতে। আবার, কখনো বা বাইক চালানো দেখে স্মিত হাসিও দেখা যায় স্বজনদের মুখে।

রাস্তায় উঠলেই দেখা মেলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ছে এমন কিশোরদের বাইক নিয়ে ছুটে যেতে। দুইজন, তিনজন কখনো বা চারজনও চড়ছে সেই বাইকে। দেখা যায়, কিশোর ও যুবকদের বাইকের সারি। চলছে হেলেদুলে ও গল্পে।

মেতে উঠছে প্রতিযোগিতায়। দ্রুতগতিতে না চালাতে পারলে যেন স্বস্তি নেই ওদের। বাইকে চলতে গিয়ে ভয়ে সাইড দিতে হচ্ছে তরুণদের। পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর। গত ২০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে দ্রুতগতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় দুই আরোহী নিহত হয়েছেন।

এতে আরও এক আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন, গত ১১ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল 'কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরা হলো না দুই বন্ধুর।' এমন দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত ২০ অক্টোবর রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৬০১ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, এ বছর ২ হাজার ৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক হাজার ৯২৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ভাবা যায়! মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারানোদের মধ্যে অধিকাংশই আমাদের কিশোর ও যুবক। যারা আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। শুধু তাই নয়, এতে সন্তান হারাচ্ছে মা-বাবা, বাবা হারাচ্ছে সন্তান, স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামী। ফলে পরিবারে নেমে আসছে বিপর্যয়।

আরও পড়ুন

এ থেকে উত্তরণ পেতে হলে- বন্ধ করতে হবে উৎকোচের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম। যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে ট্রাফিক আইন। নিশ্চিত করতে হবে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ। গ্রহণ করতে হবে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, ব্যবহার করতে হবে মানসম্পন্ন হেলমেট, বন্ধ করতে হবে বাইক চালানো অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা ও হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা।

পরিহার করতে হবে অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালানো, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে গতি, ঝুঁকি নিয়ে করা যাবে না ওভারটেকিং, করতে হবে প্রতিযোগিতা পরিহার, চালানো যাবে না হেলে-দুলে বাইক, ওঠা যাবে না দুইজনের বেশি ও সতর্ক হতে হবে পথচারীদের। এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনার অভিশাপ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার বাড়াতে হবে।

সর্বোপরি ধারণা দিতে হবে বাবা-মা ও স্বজনদের দুর্ঘটনার কারণ ও কুফল সম্পর্কে। প্রাপ্তবয়স না হওয়া পর্যন্ত যেন কিশোরদের হাতে তুলে না দেই 'দানবরূপী বাইক।' এমন সচেতনতা জরুরি। তবেই হয়তো মিলবে কিশোর ও যুবকদের অকাল মৃত্যু থেকে মুক্তি। নিরাপদ সড়ক দিবসে সেই প্রত্যাশা সবার।


এম এ মাসুদ
লেখক: প্রাবন্ধিক

masud.org2018@gmail.com

01877-292315

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেঘনায় নৌকা উল্টে ২ জেলের মৃত্যু

কনকনে শীত ডিসেম্বরেই, যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

এবার ‘চ্যাটজিপিটি প্রো’ এল গবেষকদের জন্য

আসছে ফারুকীর ৪২০ ডাবল আপ ৮৪০

সিরাজগঞ্জে ট্রেনে হেরোইন পাচারকালে নারী আটক

পাকিস্তানকে ১১৬ রানে অলআউট করল বাংলাদেশ