ভিডিও শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

খাদ্যে ভেজাল

খাদ্যে ভেজাল, প্রতীকী ছবি

আমরা কী খাচ্ছি-এ প্রশ্ন আজ এক ধরনের আতংঙ্কে পর্যবসিত হয়েছে। অবস্থাটা এমন-খাদ্যে ভেজাল নাকি ভেজালে খাদ্য, তা নিয়েও চলে উপহাস। ফলমূলসহ প্রায় সকল খাদ্যেই চলছে ভেজালের রমরমা কারবার। বলা চলে ভেজাল খাদ্যে যেন সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। তাই জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন। এই ভেজালের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

কিন্তু যথাযথ আইনের প্রয়োজনের অভাবে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের কারণে সুস্থ মানুষ নানাধরনের জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের ভেজাল বিরোধী অভিযান চলে মাঝে মাঝে তবে তা পর্যাপ্ত নয়। লোকবলের অভাব, ল্যাবরেটরির অভাব, ভেজাল বিরোধী তৎপরতা ব্যাহত হয় এতে।

খাদ্যে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সব রাসায়নিক দ্রব্য। যেগুলো খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের নানান দুরারোগ্য ব্যাধিতে। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, চাল, হলুদের গুঁড়া, লবণ-নিত্যদিনের প্রায় প্রতিটি খাবারেই রয়েছে ভেজাল। খাদ্যে যেসব বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে বহু আগেই নিষিদ্ধ ডিডিট থেকে শুরু করে ক্রোমিয়াম, আসেনিক, সিসা, ফরমালিন, অ্যালুড্রিন, বেনজয়িক এসিড ইত্যাদি।

জনস্বাস্থ্যের জন্য এত বড় হুমকি সত্ত্বেও খাদ্যে ভেজালরোধ করা যাচ্ছে না। খুব কম খাদ্যেই আছে যাতে ভেজাল নেই। ভেজাল খাদ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এক শ্রেণির দুর্নীতিপরায়ন খাদ্য ব্যবসায়ীর এই ভেজাল খাদ্যের ব্যবসার সঙ্গে একটি বিশাল চক্র জড়িত।

পত্রপত্রিকার খবরে জানা গেছে, খাবারকে সুস্বাদু করতে যেসব মসলা ব্যবহার করা হয় তা মোটোই নিরাপদ নয়। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ইতিপূর্বে এক গবেষণা বলছে, ভোক্তারা বাজার থেকে কিনে যে মসলা রান্নায় ব্যবহার করছে তার ৯০ শতাংশই ভেজাল। মরিচের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ডালের গুঁড়া, চুন ও সোডা, চালের কুঁড়া, কাউনের ধান, পঁচা মরিচে গুঁড়া, টেক্সটাইলের রঙ।

আরও পড়ুন

হলুদের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সিসা, ডালের গুঁড়া, কাঠের গুঁড়া, মটরের গুঁড়া এবং টেক্সটাইলের বিষাক্ত রঙ। অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব বিষাক্ত উপকরণ মিশিয়ে প্রতিনিয়ত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তারা কারখানায় প্যাকেটজাত করে দেশের সর্বত্র বিক্রি করছে। এসব মসলা দিয়ে যে খাবার তৈরি হয় তা পুরোটাই বিষ। সরকারি বিশেষজ্ঞ বলছেন, এসব মসলা দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে নানাবিধ রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে।

শিশুদের শারীরিক বর্ধনশীলতা ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল খাদ্যের প্রভাবে দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য মতে, দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যঅ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাধারণ মানুষ জেনে, না জেনে, এসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। যার ফলে দেশেথ মানুুষের মধ্যে নানা রোগ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে এসব রোগীর হার দেখে আমরা শঙ্কিত হচ্ছি। আমরা কি একটি রোগাক্রান্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে যাচ্ছি।

আমরা বলতে চাই, একটি সুস্থ-সবল প্রজন্ম গঠনের ক্ষেত্রে ভেজাল মুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। ফলে নিয়মিত মনিটরিং থেকে শুরু করে বাজার তদারকি ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আবার যদি খাদ্যে ভেজাল রোধ সম্ভব না হয় তবে অত্যন্ত ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, বিশুদ্ধ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি।

কেননা মানুষের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশুদ্ধ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, খাদ্যে ভেজাল প্রয়োগকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হোক, যা আমাদের আগামীতে সুস্থ প্রজন্ম নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যত দ্রুত নির্বাচন তত দ্রুত দেশ স্থিতিশীল হবে: খন্দকার মোশাররফ

ক্যালিফোর্নিয়ায় ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত

উত্তরের শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

না ফেরার দেশে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের গীতিকার আবু জাফর

দিনাজপুরে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪

অস্কারে যাওয়া গান নিয়ে যা বললেন ইমন