রোদের দেখা মেলায় স্বস্তি উত্তরাঞ্চলে, দক্ষিণাঞ্চলে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
স্টাফ রিপোর্টার : চারদিন পর আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যের দেখা মেলায় স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মাঝে। অন্যদিকে গোপালগঞ্জে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। রাজশাহীতেও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি।
গত কয়েকদিন বেশিরভাগ এলাকায় কুয়াশার দাপটে সূর্যের দেখা মেলেনি। উত্তরাঞ্চলের শীতে জবুথবু জেলাগুলোতে তিন থেকে চারদিন পর সূর্যের দেখা মিলেছে। এই অবস্থা থেকে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বগুড়ায় স্বস্তি ফেরে শীতার্ত মানুষের মাঝে।
উত্তরাঞ্চলে স্বস্তি মিললেও আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ মোট ২১ জেলার বইছে শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
গত কয়েকদিনের কুয়াশা মোড়ানো রোদহীন বৈরি আবহাওয়ায় মানুষ নাজুক অবস্থায় পড়ে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বগুড়ায় সূর্যের দেখা মেলায় পাড়া-মহল্লায় মানুষকে রোদ পোহাতে এবং প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় এবং বাড়ির ছাদে কাপড় মেলতে দেখা গেছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় যেসব এলাকায় রোদ উঠেছে তারা প্রানান্ত হয়ে ওঠে।
মাঠের কাজে নেমে পড়ে শ্রমিক। শ্রমজীবী মানুষ স্বস্তিতে রাস্তায় নামে কাজের সন্ধানে। রাস্তা-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে শিশুরা মেতে ওঠে খেলাধূলায়। আবার যেসব এলাকায় রোদের দেখা মেলেনি সেসব এলাকায় প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ ও প্রাণিকূল।
কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কারণে বেশি নাজুক অবস্থায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। বিনা কারণে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। সেখানে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষদের এ অবস্থাতেই জীবিকার সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রার ওঠা- নামার সাথে শীতের তারতম্য অনুভূত হচ্ছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে আগের দিনের চেয়ে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ছিল ২১দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়-
রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় উত্তরের এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল শতভাগ। এটি এই মৌসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। এক দিনের ব্যবধানে কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে গত তিনদিন ধরে পদ্মা পাড়ের এ জেলায় দেখা নেই সূর্যের। ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের দাপট। এতে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিপর্যস্ত জনজীবন। এখন প্রতিদিনই সন্ধ্যা নামার পরপরই নগরী ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বিকেলের পরপরই বন্ধ হচ্ছে বেশিরভাগ দোকানপাট।
রাজশাহী বানেশ্বরের তুষার আলম জানান, শহরের থেকেও বেশি শীতের প্রভাব পড়েছে গ্রামে। একই সাথে শহরের তুলনায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে এসব অঞ্চলে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিককে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও বয়স্ক রোগে হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মেঘ আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির প্রভাব কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত ৩টা থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ভোরের পর থেকে কুয়াশার আধিক্য দেখা যায়। কুয়াশার কারণে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। তিনি জানান, রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমের এলাকাগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন বিরাজ করবে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: টানা তিনদিন পর ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে পঞ্চগড়ে। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ভারী কুয়াশা বৃষ্টির মত ঝড়ার পর আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালেই দেখা দিয়েছে সূর্য। প্রায় সারাদিনই ছিল ঝলমলে রোদ। সূর্যের উত্তাপ গায়ে লেগেছে বেশ। এতে গুমোট অবস্থা থেকে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুদেরও সকালের রোদ পোহানোর জন্য বাইরে বের করতে দেখা গেছে। আর গৃহিনীরা তিনদিনের জমানো ভেজা কাপড় শুকোতে দিয়েছে রোদে।
এদিকে একদিনের রোদে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ২ ডিগ্রি বেড়ে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণার।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : প্রচন্ড শীতে গত এক সপ্তাহ ধরে কাহিল হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেক মানুষ ঘর থেকে ঠান্ডার কারনে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। গত তিনদিন থেকে তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। বুধবার সকালে তিনদিন পর সুর্যের মুখ দেখা যায়। এরপরও মিলছে না সেই কাঙ্খিত উষ্ণতা। কুড়িগ্রামের আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগ জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়়াসহ নানা রোগের রোগি বেড়েছে। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি।
রংপুর জেলা প্রতিনিধি : রংপুরে বছরের শেষ দিনে টানা তিন দিন পর দেখা মিলেছে সূর্যের। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ঝলমলে মিষ্টি রোদে স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। তবে ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস থাকায় দিনের বেলাতেও অনুভূত হচ্ছে কিছুটা শীত। এর আগে গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এই জনপদে দেখা মেলেনি সূর্যের। মেঘলা আকাশ, ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে অনুভূত হচ্ছিল হাড় কাঁপানো শীত। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।
বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। সকালে নগরীর ফলিমারী এলাকায় চাষ করা জমিতে সার ছিটান কৃষক বাদল মিয়া (৩৫)। তিনি বলেন, সকাল বেলা সূর্য উঠছে, কাজ করিতে আরাম পাছি। তিন দিন রোদ নাই, খুব কষ্ট গেল হামার। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, কুয়াশা আর মেঘের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। এতে টানা তিন দিনের হাড়কাঁপানো শীতের কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে। জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : দিনাজপুরে হাঁড় কাঁপানো শীতে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ৩০০ শীতার্তর মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০ নং কমলপুর ইউনিয়নের বড়গ্রাম ভাতখৈইর গ্রামে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে লিটিল গার্ডেন কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন দিনাজপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরনবী।
লিটিল গার্ডেন কোচিং সেন্টার এর পরিচালক মোঃ তৈমুর আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি রক্তদান সমাজ কল্যান সংস্থার সভাপতি মো: রবিউল ইসলাম রাজু।
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় তীব্র শীতের প্রকোপ কমেনি। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর)ও শীতের প্রচন্ড হীমশীতল আবহাওয়ায় জনজীবনে অসহনীয় অবস্থা দেখা দেয়। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) গাইবান্ধায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত এক চিলতে রোদের দেখা পেয়ে মানুষের মধ্যে সামান্য স্বস্তি দেখা গেলেও সন্ধায় অবারো শীতের কনকনে বাতাসে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ে।
আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাএা ছিল ২০ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস সঙ্গে বাতাসে ৯৯ শতাংশ আর্দ্রতা থাকায় শীতের তীব্রতা রাতে আরো বেড়ে যায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, গাইবান্ধার ৩টি পৌরসভাসহ ৭টি উপজেলার ৮১টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/152281