ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের হলুদ রঙের মাল্টা বাগান এখন দেশের মডেল
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: চারদিকে সবুজ মাঠ। মাঝখানে বাগানের সারি সারি গাছের ডালে ঝুলছে হলুদ রঙের বড় বড় সুমিষ্ট মাল্টা। মাল্টার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। দেশের একমাত্র হলুদ রঙের মাল্টা বাগান এটি। নিজের গবেষণায় হলুদ রঙের মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চাষি আবু জাহিদ জুয়েল। তার মাল্টা বাগান এখন দেশের মডেল। জুয়েলের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে বিভিন্ন এলাকায় হলুদ মাল্টা চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সৃত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের মাটি লেবু জাতীয় ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। সেই উপযোগিতাকে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু মাল্টা বাগান করা হয়েছে। বাগানগুলো থেকে কয়েক বছর ধরে বেশ ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাগানগুলোতে উৎপাদিত মাল্টা রঙে সবুজ আর বাইরের দেশ থেকে আসা মাল্টা হলুদ রঙের। একারণে দেশি মাল্টার দাম কম। দেশেই কিভাবে হলুদ রঙের মাল্টা উৎপাদন করা যায় এ নিয়ে কাজ শুরু করেন।
পীরগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা অরেঞ্জ ভ্যালীর মালিক আবু জাহিদ জুয়েল। তিন বছর আগে উপজেলার মালঞ্চা গ্রামে অরেঞ্জ ভ্যালীতে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি মাল্টা গাছ লাগান। মাল্টা গাছের শেকড় কেটে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা একটি দ্রবণ ব্যবহার করেন তিনি। এতে প্রথমবারেই সফলতা পান। তার মাল্টা গাছে প্রাকৃতিকভাবেই হলুদ রঙের মাল্টা আসে।
মিষ্টিও হয় অধিক। পরের বছর বাগানে মাল্টা গাছের সংখ্যা বাড়িয়ে দেড়শ’ করেন। একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রত্যেকটি গাছে হলুদ কমলা উৎপাদন করতে সক্ষম হন তিনি। বিষয়টি নজর কাড়ে কৃষি বিভাগে।
জেলা, বিভাগ এবং ঢাকা থেকে উর্ধ্বতন কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনে এসে অভিভূত হন তার। এরপর থেকে এটি নিয়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগ। এটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মাল্টা বাগান মালিক জুয়েল জানান, বর্তমানে তার বাগানে ৩শ’ মাল্টার গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে শত শত হলুদ রঙের মাল্টা ফলেছে। দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন তার বাগানে। তার বাগানের উৎপাদিত মাল্টা বাগানেই সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বেশ লাভবান হবেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, দেশে হলুদ রঙের মাল্টা উৎপাদনের প্রথম উদ্যোক্তা জুয়েল। তার বাগানের হলুদ মাল্টা বেশ রসালো ও সুমিষ্ট। এটি দেশে মধ্যে মডেল। এ প্রযুক্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে চাষিরা অধিক লাভবান হবেন এবং বিদেশী মাল্টার উপর নির্ভশীলতা কমবে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/152152