শৈশবে বেগম খালেদা জিয়াকে দরবেশ বলেছিলেন ‘মা, তুমি রাজরাণী হবে’

শৈশবে বেগম খালেদা জিয়াকে দরবেশ বলেছিলেন ‘মা, তুমি রাজরাণী হবে’

শাহারিয়ার হিরু, দিনাজপুর: শৈশবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে এক দরবেশ বলেছিলেন,মা তুমি একদিন রাজরাণী হবে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে তার কথার পুনরাবৃত্তি করেন, বেগম খালেদা জিয়ার শৈশবে খেলার সাথী দিনাজপুর শহরের সুইহারী মহল্লার এডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলামের স্ত্রী কামরুন নাহার বেগম।

তিনি বলেন, আমার বাবা মরহুম জামিল উদ্দিনের বাড়ি এবং বেগম খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কানন্দার মজুমদারের বাড়ি শহরের ঈদগাহ বস্তি এলাকায় পাশাপাশি ছিল। ফলে আমরা একই এলাকায় বসবাস ও বেড়ে ওঠা একসাথে হয়েছে। শৈশবে আমি ও আমার বড় বোনদের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার খেলাধুলা ও স্কুলে যাতায়াত প্রায় এক সাথে করতাম।

তিনি আমার বড় বোন মাহমুদা বেগমের বান্ধবী হয়েছিলেন। তারা দুজন একই ক্লাসে দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় পড়াশুনা করতো।আমার বড় বোন মাহমুদা বেগম বৈবাহিক সূত্রে বগুড়া শহরে বসবাস করতেন। তিনি চার মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা ৬ বোন ছিলাম, তার মধ্যে আমার বড় বোন শামসুন্নাহর বেগম, তার ছোট, মাহমুদা বেগম, (বেগম খালেদা জিয়ার বান্ধবী) ও আমি কামরুনাহার বেগম একসাথে খেলাধুলা ও  স্কুলে যাতায়াত করতাম।

তিনি বলেন, শহরের ঈদগাহ বস্তি মহল্লায় আমাদের বাড়ির পাশে, আমরা একদিন বেগম খালেদা জিয়াসহ খেলাধুলা করছিলাম। খেলাধুলা করাকালীন হঠাৎ এক দরবেশ ওই স্থানে এসে হাজির। দরবেশ বাবা আমাদের সাথে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে তাকে কাছে ডাকেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে বলেন, ‘মা তুমি একজন ভাগ্যবতি মেয়ে, দেখো একদিন তুমি রাজরাণী হবে।’ এই কথা বলে দরবেশ সেখান থেকে চলে যান। এসব কথা কামরুননাহার তার নিজ বাসা শহর সুইহারীতে ব্যক্ত করেন। কামরুন নাহার বেগমের বয়স এখন প্রায় ৭৬ বছর। তিনি নিজেও বার্ধক্যজনিত রোগে তার নিজ বাড়িতেই বসবাস করছেন।

একই কথা বলেন, কামরুন নাহার বেগমের বড় বোন মরহুম শামসুন্নাহার বেগমের পুত্র এডভোকেট মোল্লা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন,তার মা শামসুন্নাহার বেগম, ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন।

১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখন তার মা বেগম শামসুন্নাহার ওই সময় তার ছেলে-মেয়েদের বলেছিলেন, দেখো ছোট বেলায় সেই দরবেশের উক্তি আজ সফল হয়েছে। ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী নন, তিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন’।

বেগম খালেদা জিয়া স্কুলে পড়াশোনাকালীন একমাত্র বান্ধবী দিনাজপুর শহরের মিশন রোডস্থ সুরেন্দ্রনাথ শীলের কন্যা ঊষারাণী শীল (৮০) বলেন, আমি এবং বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে একসাথে ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা করেছি। বেগম খালেদা একজন ভালো মনের মানুষ ও নিরহঙ্কারী ছিলেন। তিনি স্কুলে সবার সাথে হাসিখুশি মনে কথাবার্তা বলতেন এবং সব সময় হাসি-খুশি থাকতেন।

তিনি বলেন, সে সময় দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সবচেয়ে সুন্দরী একজন স্কুলছাত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা নাজমা ইয়াসমিন বলেন,  দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৯৫৪ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে বেগম খালেদা জিয়া ভর্তি হয়েছিলেন। এই বিদ্যালয় থেকেই ১৯৬০ সালে মেট্রিক পাস করেন, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

দিনাজপুর পৌর শহরের বালুবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ‘তৈয়বা ভিলায়’ গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি বর্তমান ‘ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে দ্বিতীয়তলায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তার বাবা-মা যে কক্ষে বসবাস করতেন, ঐ কক্ষগুলো সংরক্ষিত হিসেবে তালাবদ্ধ রয়েছে। এসব কক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কারিনা বেওয়া নামের এক বৃদ্ধা আছেন। তিনি দীর্ঘদিন খালেদা জিয়ার বাবা-মা’কে দেখাশোনা করেছেন। বর্তমান তিনি ওই কক্ষগুলো দেখাশোনা করেন।

কেয়ারটেকার কারিনা বেওয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানকার দায়িত্বে আছি। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে এখানে এসে পাইনি। তার বাবা-মাকে পেয়েছি। উনারা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমাকে খুব ভালবাসতেন। আজ পর্যন্ত এখানে আমি আছি। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা প্রায়ই এই বাসায় আসেন। বেগম খালেদা জিয়ার মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর খবর শুনে তিনি খুবই শোকাহত বলে জানান।

বেগম খালেদা জিয়ার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ৭৮ বছর বয়সী মোস্তা হাসানুর নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘তৈয়বা ভিলাটি’ খালেদা (পুতুল) আপার মায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আপা আমার থেকে দুই থেকে তিন বছরের বড় হবেন।

পাশাপাশি বাড়ি আমাদের, আমি সবসময় তাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতাম। তার বাবা-মা আমাকে অনেক ভালবাসতেন এবং পুতুল আপাও আমাকে খুব স্নেহ করতেন। মঙ্গলবার তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন শুনে শোকাহত হয়েছি। আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করছি আপাকে যেন বেহেশত নসিব করেন।

খালেদা জিয়ার খালাতো ভাই আবু তাহের আবু বলেন, আমি আপার চেয়ে অনেক ছোট। আমি জন্মের পর দিনাজপুরে তাকে পাইনি। জিয়াউর রহমানের সাথে বিয়ের পর তিনি চলে যান। তার মা আমার মায়ের ছোট বোন। তার বাবা-মা আমাকে খুব আদর-যত্ন করতেন। আপার মৃত্যুর খবর শুনেছি, আমরা সকলেই শোকাহত। তার বিদায়ী আত্মার জন্য জন্য আমরা সবাই দোয়া করছি।

দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা ইয়াসমিন বলেন, আমি এবং আমার স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ধন্য, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে অনেক উচ্চ পর্যায়ে আছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের গর্ব।

তিনি আমাদের দিনাজপুরের মেয়ে এবং এই স্কুলেরই শিক্ষার্থী। তিনি ১৯৫৪ সালে এই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে এখান থেকে এসএসসি পাস করেন। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে তিনিসহ ওই স্কুলের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই শোকাহত বলে তিনি ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের দিনাজপুর-৩ সদর আসনে তিনি নির্বাচন করবেন। আমরা এই আসনের জনগণ অধীর আগ্রহে তার অপেক্ষায় ছিলাম।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/152144