খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নেমে এসেছে গভীর শোক
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নেমে এসেছে গভীর শোক। বগুড়া-৬ সদর আসন এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত এই নেত্রী বগুড়ার মানুষের অতি আপনজন ছিলেন। তিনি ছিলেন বগুড়ার মানুষের অভিভাবক। তার মৃত্যুতে অভিভাবকহারা বগুড়ার মানুষ মুষড়ে গেছে।

শীতের সকালে সচেতন নাগরিকেরা নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়ার মতো করে তাদের স্বজনদের কাছে ফোন করে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছান। তার মৃত্যুর খবরে অনেকেই চোখেন পানি ধরে রাখতে পারেনি। বিএনপির নেতা-কর্মী নন বগুড়ার এমন অনেক মানুষ কেঁদেছেন প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর সংবাদে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ আসার পরপরই জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কস্থ দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হতে থাকেন। দলীয় কার্যালয়ে এসেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেতা-কর্মীরা।
সকালে যতই এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছিলো ততই স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল শহর। শহরের অলি-গলি, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে নীরবতা। কোথাও নেই স্লোগান বা রাজনৈতিক আলোচনা শুধু স্মৃতিচারণা, দীর্ঘশ্বাস আর স্তব্ধতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছিলো খালেদা জিয়াকে নিয়ে শোকগাঁথা কথা। ২০০১ সালে বগুড়া-৬ সদর আসন থেকে খালেদা জিয়া ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে এবং সবচে বড় ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। তিনি এই আসনে ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৫ ভোট পেয়ে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত ভোট প্রাপ্তির হার ছিলো ৭৮.৯।
তার এই ভোট বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক ভোট। তিনি বগুড়া-৭(গাবতলী- শাজাহানপুর ) আসনের নির্বাচনে ৭৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫২২ ভোট। । যে শহর বারবার ভোটের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, সেই বগুড়াবাসী হারাল তার বধূকে, তার নেত্রীকে, তার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনিবার্য অধ্যায়কে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় খালেদা জিয়ার শ্বশুরবাড়ি। সময়ের সঙ্গে এই সম্পর্ক কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, হয়ে উঠেছিল আবেগের জায়গা। বগুড়ার মানুষ তাকে দেখেছে ঘরের বধূ হিসেবে, আবার দেখেছে দেশের নেতৃত্বে থাকা এক দৃঢ়চেতা রাজনীতিক হিসেবে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়ায় বিএনপির সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কোরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, এটি শুধু একজন নেত্রীর বিদায় নয়, এটি একটি যুগের সমাপ্তি। তবে শোক শুধু দলীয় গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই; রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন এমন অনেক মানুষও এই মৃত্যুতে আবেগাপ্লুত।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। অনেকের স্মৃতিতে ভেসে উঠছে নির্বাচনি দিনের চিত্র। ভোটের আগে মিছিল, সভা আর মানুষের ঢল। খালেদা জিয়া যখন নির্বাচনি প্রচারে বগুড়ায় আসতেন, শহরের চেহারাই বদলে যেত। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকত লাখো মানুষ, এক ঝলক দেখার আশায়। তিনি বার বার বগুড়ায় এসেছেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। রেজাউল করিম বাদশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবল আমাদের নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন মায়ের মতো। বগুড়ার মানুষের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর মৃত্যুতে আমরা সত্যিকার অর্থেই এতিম হয়ে গেলাম।’ তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ায় বেশি কথা বলতে পারেননি।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থাতেও ম্যাডাম দলের ও দেশের মানুষের খোঁজ নিতেন। এই ক্ষতি কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়।’ জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই শহরের নওয়াববাড়ি রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম করা হয়। জেলা বিএনপির উদ্যোগে মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে বাদ যোহর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে।
বিএনপি ৭ দিনের শোক ঘোষণা করায় নেতা-কর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করে। আগামীকাল বুধবার খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত থেকে নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ ঢাকায় যেতে শুরু করেছে। আগামীকাল বুধবার সকালেও বহু নেতা-কর্মী ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা হবেন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বগুড়া থেকে ঢাকাগামী কোন বাসে টিকিটে ছিলো না। নেতা-কর্মীরা যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আগেই টিকেট কেটে রাখেন। হিম শীতল দিনে খালেদা জিয়ার মৃত্যু মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/152135