বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : দিনাজপুরের মেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলের চেয়ারপারসনকে হারিয়ে শোকাহত দলীয় নেতাকর্মীসহ জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ। শোক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি’র চেয়ারপারসন দেশনেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই জেলার ১৩টি উপজেলা, ১০৩টি ইউনিয়ন ও ৯টি পৌরসভা থেকে নেতাকর্মীরা শহরে গনেশতলা বিএনপি জেলা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেত্রীকে বিদায়ে আগতদের সকলের চোখ অশ্রুসিক্ত।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, আমাদের দিনাজপুরের কন্যা বিএরপি চেয়ারপারসন ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। তাকে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মাত্র কয়েকদিন আগেই আমরা কয়েকজন জেলার নেতা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তার শিশুসুলভ আচরণ আমাদের মোহিত করেছিল। আমরা দিনাজপুরের মানুষ তাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে নির্বাচিত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমদের সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল। জাতির বড় প্রয়োজনের সময়ে তাকে আমরা আজ সকলেই হারালাম। তবে এই দেশ ও জাতি যতদিন থাকবে, মানুষ দেশের এক আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ততদিন মনে রাখবেন।

জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি বলেন, দিনাজপুরের কৃতী সন্তান ও এখনে শৈশবে বেড়ে ওঠা বেগম খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেছিল দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে। দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই তিনি দেশের শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। আমরা তাকে শ্রদ্ধা ভরে সম্মান করেছি। এমন নেতা আর জন্মাবে না। রাজনীতির অঙ্গনে আমরা আজ একজন অভিভাবক হারালাম। এ সময়ে তার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল।

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। দিনাজপুরে মেডিকেল কলেজ, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসাপাতাল ও রিচার্স সেন্টার, শিক্ষা বোর্ডসহ যত উন্নয়ন হয়েছে সব হয়েছে দেশনেত্রীর হাত ধরে। উনার যে স্বপ্ন গুলো রয়ে গেছে তা আমরা বাস্তবায়ন করবো।

দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা রওশনারা ছবি বলেন, তিনি যেমন দেশের জন্য গর্বের ছিলেন, তেমনি আমরাও গর্ব করে বলতাম বেগম খালেদা জিয়া এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বড় অসময়ে চলে সবাইকে অশ্রু শুদ্ধ নয়নে রেখে চলে গেলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার দিনাজপুরে বেড়ে ওঠা তার বাবা প্রয়াত ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে তার দিনাজপুরে আগমন ঘটেছিল। তারা দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেছিলেন। তাট মায়ের নাম বেগম তৈয়বা মজুমদা। বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পরে তারা শহরের বালুবাড়ী শহিদ মিনার মোড়ে তৈয়বা ভিলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সেই বাড়িটিতে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল চলছে। বাবা, মা ও বড় বোনের কবর রয়েছে দিনাজপুর শহরে ফরিদপুর কবরস্থানে। বেগম খালেদা ৫ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসের পূর্বে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) পড়াশোনা করেছেন।

এবারে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দিনাজপুরে প্রথম প্রার্থী হওয়ায় সমগ্র জেলা ও শহরবাসীর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এখনে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হতে প্রার্থী হননি। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক। নিজের জন্মস্থানে এবার প্রথম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র গত ২৮ ডিসেম্বর জমা দিয়েছিলেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তাকে নির্বাচিত করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা দিনাজপুর বাসীর স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুর জেলা বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন, জেলা জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোট, জাতীয় পার্টি, জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, দিনাজপুর প্রেস ক্লাব, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সর্বমহলের পক্ষ থেকে গভীর শোক বার্তা জানিয়ে তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে। 

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/152069