নেতার আগে জনতা
দেশের মাটি স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের গর্বিত জননেতা, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি। দীর্ঘ নির্বাসন শেষে সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমিতে তাঁর এই ফিরে আসা ইতিহাসের এক গভীর সন্ধিক্ষণ। সকলেই জানেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যা ১/১১ নামেও পরিচিত, সেদিন বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণকারী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। আঠারো মাস কারাবাসের পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন। এতদিন তিনি ব্রিটেনেই স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর স্বদেশের মাটিতে পা রাখা মানেই আশা ও প্রত্যয়ের এক নতুন অধ্যায়। তারেক রহমান আজ আর শুধু জিয়া-খালেদা পুত্র নন, তিনি এখন জনমানুষের নেতা। বিশেষ করে তাঁর ঘোষিত ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শ্লোগানটি দেশের আপামর মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। দেশের মাটিতে ফিরে এসে তিনি এদেশের কোটি কোটি মানুষের সংগ্রাম ও দেশ গড়ার স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করলেন, নিয়ে গেলেন এক নতুন উচ্চতায়।
প্রবাসের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে তারেক রহমান এর দেশের বুকে ফেরা শুধু একজন মানুষের নয়, এটা যেন বহু হৃদয়ের অপেক্ষা ও অনুভূতির ভালবাসা, গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ের এক নজীরবিহীন প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়াকাশে তারেক রহমান এর প্রত্যাবর্তন আজ অতীতের সকল কষ্ট, নির্যাতন, দুর্ভোগ শেষে আশা ও ভালবাসার এক মহামিলনের ক্ষণ। এটা কেবল জিয়া পরিবারের একতাবদ্ধতা নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের জন্যেও সংঘাত ও হিংসা থেকে মুক্তির আহ্বান। অন্তত: বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে সেভাবেই প্রত্যাশা করেন। আমরাও প্রত্যাশা করি, তাঁর এই দেশে ফেরাটা হবে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, স্থিতি ও শান্তির নতুন সূচনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজমান প্রতিহিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও পশ্চাৎমুখীতা অবসানে তিনি মনোনিবেশ করবেন। ‘নেতার আগে জনতা’, ‘ক্ষমতার আগে সমতা’, ‘প্রতিহিংসা নয়, একতা’ - এই কথাগুলোর মর্যাদা তিনি রক্ষা করবেন। নিজের দলের নেতা-কর্মীদের তিনি সত্যিকারের দেশ গড়ার মন্ত্রে, শান্তি ও অংশীদারিত্বের পথে পরিচালনা করবেন। অনেক হয়েছে আর নয়, এখন দেশ গড়ার সময়। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ - সত্যিকার অর্থেই এখন এটা হৃদয়ে ধারণ করার সময়। আশাকরি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা এই আদর্শ ও জন প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখাবেন। আশাকরি দলের নেতা-কর্মীরা নেতার অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিবেন।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমান এর দিকে তাকিয়ে আছেন। অশুভ শক্তির আতঙ্কে মুহ্যমান সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ আশায় বুক বেঁধে রেখেছেন। নেতাকে সামনে রেখে দল এগিয়ে যায় কিন্তু নেতা তাঁর সামনে রাখেন জনতাকে। জনতা যেখানে সবার আগে, সবার উপরে, সেখানে স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ কিংবা দুর্বৃত্তায়ন স্থান করে নিতে পারে না। এ সময়কালে তাঁর জীবনে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলেও তিনি দেশে এসে দাফন করতে পারেন নি। মাত্র কিছুদিন আগেও যখন তাঁর প্রিয় মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর সাথে লড়ছিলেন তখনও তিনি মাকে দেখতে আসতে নানা আশঙ্কা, নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পতিত হয়েছিলেন। এটা যদিও আনন্দের যে, শেষ পর্যন্ত সকল শঙ্কা, ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে তিনি ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বুকে, তাঁর চিকিৎসাধীন মায়ের বুকে ফিরে এসেছেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারেক রহমান এর দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক ঘটনাবলীকেই নতুন মাত্রা দিয়েছে। পাল্টে দিয়েছে অনেক হিসাব-নিকাশ। দেশের সকল মহলে এখন আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। সেটা কেবল দলের ভেতরেই নয়, দলের বাইরে থাকা গণতন্ত্র ও শান্তিকামী জনতার মধ্যেও ছড়িয়েছে। তাঁর প্রতি ভালবাসা কেবল দলের নেতা-কর্মীদের নয়, বরং পুরো দেশ যেন আজ আনন্দের সাথে তার সন্তানকে সপরিবারে বরণ করে নিয়েছে।
নেতা এসেছেন, তাঁকে স্বাগত জানাই। তিনি জনগণের হৃদয়ের ভাষা বোঝেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। আশাকরি তিনি চাটুকার মুক্ত থাকবেন। আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব অতীতে চাটুকারদের বিভ্রান্তিতেই পথ হারিয়েছেন। আমরা তার পুনরাবৃত্তি চাই না। তারেক রহমান দেশ ও জনগণের অভিভাবক হয়ে থাকবেন সেটা কামনা করছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি। মা-পুত্রের সম্মিলন রহমত হয়ে আসুক পরিবার ও বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে, ক্ষেতে ও খামারে।
লেখক
আতাউর রহমান মিটন
কলামিস্ট ও গবেষক
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151699