যীশুর ত্যাগ ও মহিমায় সবার জীবন উজ্জ্বল হোক

যীশুর ত্যাগ ও মহিমায় সবার জীবন উজ্জ্বল হোক

আজ শুভ বড়দিন! যীশুখ্রিস্টের পবিত্র শুভ জন্মদিন। ২৫শে ডিসেম্বর মানেই অনেক অনেক আনন্দ আর ভালবাসা। আজকের এই শুভদিনে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীসহ শান্তিপ্রিয় সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। যীশুখ্রীস্টের ত্যাগ ও মহিমায় সবার জীবন উজ্বল হয়ে উঠুক, ত্যাগের শিক্ষা উজ্জীবিত করুক সকলকেই এই প্রত্যাশায়। পবিত্র বড়দিন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারন এই দিনে সকল মানবের পাপের ভার বহন করে তিনি মানুষ রুপে জন্ম নিলেন বেৎলেহেমের ছোট্ট জরাজীর্ন গোয়াল ঘরে, তিনি আমাদের রাজাধীরাজ। ঈশ্বর চাইলে তার নিজ পুত্রকে অনেক বড় এবং জাঁকজমক পূর্ণ রাজকীয়ভাবে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করাতে পারতেন কিন্তু করালেন না কারণ এতে ভাববাদীগণের বাক্য পূর্ণ হয় (যিশাইয়, মীখা)। যীশুর জন্ম নিয়ে সাধু যোহন প্রচলিত আখ্যানের চেয়ে তার ঐশ্বরিক পরিচয় ও সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গভীর ও মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন, সেখানে তিনি বলেছেন ”আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্যই ঈশ্বর” এবং সেই ”বাক্যই মাংস হলেন ও আমাদের মধ্যে বাস করলেন” (যোহন ১:১, ১৪) যা যীশুর মানব অবতারণার ঐশ্বরিক উৎস ও উদ্দেশ্যে বর্ণনা করে এবং তার জন্মকে ঈশ্বরের চিরন্তন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। যীশু মানব রুপে জন্ম নিলেন এবং এমন ভাবে জন্মগ্রহন করলেন যেন ঈশ্বরের এবং মানুষের আরও সান্নিধ্যে আসতে পারে এবং তিনি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে জগতে আবির্ভাব হয়েছিলেন। সাধু মথি লিখিত সুসমাচারে যীশুর জন্ম বৃত্তান্ত যোসেফের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে মরিয়ম গর্ভবতী হলে যোসেফ তাকে গোপনে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু ঈশ্বর এক স্বর্গদূতের মাধ্যমে তাকে স্বপ্ন দেখান যে, মরিয়ম পবিত্র আত্মার প্রভাবে গর্ভবতী হয়েছেন এবং এই শিশুর নাম যীশু রাখতে হবে যিনি ”ইম্মানুয়েল” (আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর) হবেন। এবং যোসেফ ঈশ্বরের বাক্য মেনে মরিয়মকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন। ঈশ্বরের পুত্র এবং মানবজাতির ত্রাতা এবং তার আগমন ঈশ্বরের পরিকল্পনা পূরনের একটি অংশ। আমরা বড়দিন উপলক্ষে অনেক আনন্দ করি পিঠাপুলির আয়োজন করি ভাল ভাল রান্না হয় অনেক আত্মীয় স্বজন আসেন প্রতিটা গীর্জায় ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ উপাসনা হয় এবং উপাসনা শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। একে অন্যকে বিভিন্ন উপহার আদান প্রদান করে থাকেন। ২৪ তারিখের পূর্বে প্রতিটা খ্রীস্টান বাড়িগুলো সাজ সাজ রব এবং চারদিকে সুভাসিত বাতাস বয়ে যায় সবার মনে এক অনাবিল আনন্দ যেন যীশুকে গ্রহণ করতে এবং তাঁর প্রতি ভক্তি ভালোবাসা দেখাতে সকলে সদা প্রস্তুত। যীশুর জন্মদিন উপলক্ষে  বার্তাগুলো সাধারণত আনন্দ, শান্তি, ঈশ্বরের ভালোবাস ও আশীর্বাদ কেন্দ্রিক হয়। যেখানে তাঁর পৃথিবীতে আগমনকে মানবজাতির জন্য এক মহা উপহার হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এবং তাঁর দেখানো পথে চলতে ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে উৎসাহিত করা হয়। ঈশ্বর পুত্রকে বরণ করার পূর্বে বড়দিন পালন প্রস্তুতি এবং এক সপ্তাহে আগে থেকে ধ্যান ও প্রার্থনা করা হয়। বড়দিনের  উৎসব সবার মাঝে আনন্দপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও শান্তিময় হোক। এই মহামন্ত্রকে সামনে রেখে সকলকে আবারও বড়দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা জানাই প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমাদের শিক্ষা দেয় মানবতার আর মূল্যবোধর প্রতিটি ধর্মই আমাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা প্রদান করে। জয় হোক বিশ্ব মানবতার জয় হোক বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের। এই বিশেষ দিনটি আপনার আমার সকলের জীবনকে নতুন আলো এনে দিতে পারে এবং সর্বদা ভালবাসা ও উৎসাহ, শান্তি ভরা থাকুন এই প্রার্থনা। আজকের এইদিনে আমাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আবারও শুভ বড়দিনের জানাই প্রীতি ও শুভেচ্ছা। 

লেখক :

বিশ্বনাথ জর্জ তিগ্যা

সভাপতি- বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, 
বগুড়া জেলা শাখা। 

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151460