ফ্রান্সের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি আলজেরিয়ার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঔপনিবেশিক আমলের অপরাধের জন্য ফ্রান্সের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে আলজেরিয়া। দেশটির পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত একটি আইনে এই দাবির সঙ্গে ফরাসি উপনিবেশকে অবৈধ ঘোষণা এবং ঔপনিবেশিক আমলকে কোনও মাহাত্ম্য আরোপকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর মাধ্যমে আলজেরিয়া ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্কে চলমান টানাপড়েন আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৬৩ বছর আগে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। এএফপি’র খবরে বলা হয়, পার্লামেন্ট সদস্যরা জাতীয় পতাকার রঙের স্কার্ফ পরে ‘জয় হোক আলজেরিয়া’ স্লোগান দিয়ে বিলটি পাসে করতালি দেন। আইনে বলা হয়েছে, ফ্রান্স তার সৃষ্ট ‘ট্র্যাজেডির’ জন্য ‘আইনি দায়বদ্ধতা’ বহন করে এবং ‘পূর্ণ ও ন্যায্য’ ক্ষতিপূরণ আলজেরীয় রাষ্ট্র ও জনগণের ‘অবিচ্ছেদ্য অধিকার’। এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি ফ্রান্স।
আলজেরিয়া ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল। দেশটির ইতিহাসে ওই সময়টি গণহত্যা ও ব্যাপক নির্বাসনের মাধ্যমে চিহ্নিত। পরে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় আলজেরিয়া। দেশটির দাবি, ওই যুদ্ধে ১৫ লাখ মানুষ নিহত হন। তবে ফরাসি ইতিহাসবিদরা নিহতের সংখ্যা আরও কম বলে মনে করেন।
ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগেই অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, আলজেরিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসন ছিল ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের তরফ থেকে তিনি এখনও ক্ষমা চাননি।
এই আইন এমন এক সময়ে পাস হলো, যখন দাসত্ব ও উপনিবেশবাদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং পশ্চিমা জাদুঘরে থাকা লুণ্ঠিত নিদর্শন ফেরত দেওয়ার দাবিতে চাপ বাড়ছে। আলজেরীয় আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরে ষোড়শ শতাব্দীর ব্রোঞ্জ কামান ‘বাবা মারজুগ’ ফেরতের দাবি জানিয়ে আসছেন, যা ১৮৩০ সালে ফরাসিরা তা নিয়ে গিয়ে বর্তমানে তাদের ব্রেস্ট বন্দরে রেখেছে। ২০২০ সালে প্যারিস উনিশ শতকে ফরাসি ঔপনিবেশিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহত ২৪ আলজেরীয় যোদ্ধার দেহাবশেষ ফেরত দেয়। গত মাসে আলজেরিয়া ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আফ্রিকান দেশগুলোর একটি সম্মেলনও আয়োজন করে।
আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আত্তাফ বলেন, একটি আইনি কাঠামো নিশ্চিত করবে যেন পুনরুদ্ধারকে ‘উপহার বা অনুগ্রহ’ হিসেবে দেখা না হয়। সূত্র : বিবিসি
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151445