বগুড়ায় মৃত নারীর টাকা গেল এসআই’র পকেটে
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় এক দরিদ্র নারীর মৃত্যুর পর মানবিক সহায়তার বদলে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে বগুড়া সদর থানার স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, মৃত নারীর ঘরে থাকা ২০ হাজার টাকা ও চার আনা সোনার গহনা উদ্ধার দেখানো হলেও তা স্বজনদের হাতে পৌঁছায়নি। বরং ওই টাকা ও সোনার গহনা এসআই জাহাঙ্গীর আলমের পকেটে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত নারীর ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা এবং সোনার গহনা সংক্রান্ত বিষয়টি থানায় জিডিভুক্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এসআই জাহাঙ্গীর আলম কোন টাকা এবং গহনা জিডিমূলে আদালতে জমা দেননি বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও) সুশান্ত কুমার।
এদিকে সদর থানার একটি সূত্র জানিয়েছে এসআই জাহাঙ্গীর আলম এ সংক্রান্তে কোন জিডি করেননি। ওই নারীর লাশ উদ্ধারের দিন গত ৬ ডিসেম্বর রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বগুড়া সদর থানার ৫৫৭ নম্বর জিডি ফাঁকা রেখেছেন তিনি। জিডি’র বিষয়ে তিনি অপমৃত্যু মামলা রুজু লিখে রেখেছেন। গতকাল বুধবার ২৪ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত অনলাইন জিডি’র লেখার স্থানটি ফাঁকা রয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া শহরের জামিলনগরে জনৈক শাজাহানের বাড়িতে সাবিকুন নাহার নামের এক নারী ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ওই নারীর কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় বাড়ির মালিকের সংবাদে পুলিশ রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে বিছানায় পড়ে থাকা নারীর লাশ উদ্ধার করে।
বাড়ির মালিক জানান, ওই নারী ৯ মাস আগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে একাই বসবাস করতেন। তিনি পেশায় দর্জি শ্রমিক ছিলেন। বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় জমা দেওয়া ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার ঠিকানা চট্টগ্রামের পোর্ট এলাকার আলী শাহ নগর।
বাড়ির মালিক শাজাহান আলী ও তার স্ত্রী শামিমা বেগম জানান, ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে পাঠানোর পর এসআই জাহাঙ্গীর আলম আমাদের উপস্থিতিতে ঘর তল্লাশি করে ২০ হাজার টাকা ও চার আনা ওজনের সোনার গহনা উদ্ধার করেন। এসময় স্থানীয় গোলাম মোস্তফাসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, টাকা ও গহনা উদ্ধারের সময় পুলিশ কোন জব্দ তালিকা তৈরি করে আমাদের সই নেননি। দুইদিন পর আমাদেরকে পুলিশ ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে এসআই জাহাঙ্গীর আলম লাশ দাফন করতে বলেন। এসময় আমরা পুলিশকে জানাই, ওই নারী তিন মাসের বাড়ি ভাড়া ৯ হাজার টাকা বকেয়া রেখেছেন। এছাড়াও দাফন কাফনের খরচ আছে। আমাদেরকে উদ্ধার করা টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দিলে আমরা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করবো। তিনি আমাদেরকে টাকা না দেওয়ায় লাশ দাফনের দায়িত্ব গ্রহণ করিনি।
এদিকে স্বজন না থাকায় এবং কেউ দায়িত্ব না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত মৃত নারীর দাফনের দায়িত্ব নেয় সামাজিক সংগঠন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। তারা মানবিকতার পরিচয় দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করলেও মৃত নারীর টাকা কোথায় গেল, সে প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।
বগুড়ার পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং জামিলনগর এলাকার বাসিন্দা এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, বাড়ির মালিক শাজাহান আমাকে জানান, মৃত নারীর ঘর থেকে টাকা উদ্ধার হলেও দাফন-কাফনের জন্য পুলিশ টাকা না দেওয়ায় আমরা কোন দায়িত্ব নেইনি। তিনি আরও বলেন, লাশের সম্মানজনক দাফন হলেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পুরো পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মৃত মানুষের টাকা যদি পুলিশের হাতে নিরাপদ না থাকে, তবে জীবিতদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত নারীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা বগুড়ায় এসে লাশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। আর তার ঘর থেকে উদ্ধার করা টাকা ও গহনা সদর থানায় জিডি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151378