চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা, গাজায় মৃত্যুর মুখে হাজারো মানুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধার কারণে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্যব্যবস্থা চরম সংকটে পড়েছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তার অভাবে হাজারও রোগী মৃত্যুর মুখে, আর হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন গাজার শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। মূলত ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে এবং ওষুধ ও সরঞ্জাম সংকটে উপত্যকাটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধার কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা নজিরবিহীন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে হাজারও রোগী মৃত্যুঝুঁকি বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কায় রয়েছেন বলে সতর্ক করেছেন গাজার এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ মঙ্গলবার আল জাজিরাকে বলেন, গাজার হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি এখন ‘করুণ ও ভয়াবহ’। ইসরায়েল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর প্রবেশ অব্যাহতভাবে আটকে রাখায় গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় জীবনরক্ষাকারী মৌলিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ঢুকতে না দেয়ায় তাদের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে করা সমঝোতা লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সংখ্যক চিকিৎসা সহায়তা বহনকারী ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী চলমান ও সংকটাপন্ন স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা আরও গভীর হচ্ছে। আল-বারশ জানান, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যাপক ঘাটতিতে ভুগছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব প্রকট। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইন, অবশ করার ওষুধ, গজ, ডায়ালাইসিস সামগ্রীর তীব্র সংকট রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জেনারেটরের ভয়াবহ ঘাটতিও চিকিৎসা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের পর গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট।
মূলত ইসরায়েলের দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই আগ্রাসনে গাজার প্রায় সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হামলার শিকার হয়েছে। অন্তত ১২৫টি স্বাস্থ্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৪টি হাসপাতাল। এ সময় ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এখনও ৯৫ জন ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করে রেখেছে ইসরায়েল, যাদের মধ্যে ৮০ জনই গাজার। আল-বারশ বলেন, শুধু ইসরায়েলি হামলায় আহতরাই নয়, এই সংকটে ভুগছেন আরও বহু রোগী। চিকিৎসার অভাবে প্রায় ৪ হাজার গ্লকোমা রোগী স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকিতে রয়েছেন। একই সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার বাস্তুচ্যুত অন্তঃসত্ত্বা নারী অস্বাস্থ্যকর আশ্রয়ে বসবাস করছেন। আর এটি তাদের ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এদিকে ইসরায়েলি সহায়তা সীমাবদ্ধতার কারণে মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও সতর্ক করেন তিনি। গাজার বাইরে চিকিৎসার জন্য রোগী পাঠানোর ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ, আর সেই অপেক্ষাতেই প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151303