দুগ্ধপণ্য আমদানিতে চীনের নতুন শুল্ক

দুগ্ধপণ্য আমদানিতে চীনের নতুন শুল্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপ থেকে আমদানি করা কিছু দুগ্ধপণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। আর এই পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) চীনের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে ইউরোপীয় জোটটি।

এসব শুল্ক মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হচ্ছে। এদিকে, চীনের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরোধেরই সর্বশেষ অধ্যায়, যা খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যানবাহন পর্যন্ত বিস্তৃত। চীনের আরোপ করা ‘ডিউটি ডিপোজিট’ বা শুল্ক আমানতের হার ২১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে।

বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন শুল্কের আওতায় রয়েছে তাজা ও প্রক্রিয়াজাত চিজ, দই, ব্লু চিজ এবং কিছু দুধ ও ক্রিমজাত পণ্য।

চীনের ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুগ্ধপণ্যের বিরুদ্ধে ভর্তুকিবিরোধী তদন্ত শুরু করে চীনা কর্তৃপক্ষ। এই তদন্ত আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভর্তুকির সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরীণ দুগ্ধশিল্পের ‘গুরুতর ক্ষতির’ যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

তবে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্যবিষয়ক এক মুখপাত্র বলেন, আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী এই তদন্ত সন্দেহজনক অভিযোগ ও অপর্যাপ্ত প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে। ফলে এসব পদক্ষেপ অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়।

তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় কমিশন বর্তমানে চীনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করছে এবং শিগগিরই চীনা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে মতামত জানাবে।

ইইউর দুগ্ধপণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে এমন এক সময়, যখন এক সপ্তাহ আগেই চীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করা শুকরের মাংসের ওপর পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কথা জানায়।

ডিসেম্বর ১৭ থেকে কার্যকর হওয়া ওই শুল্কের হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর থেকে চালু থাকা অস্থায়ী ১৫ দশমিক ৬ থেকে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ শুল্কের তুলনায় কম।

দীর্ঘদিন ধরেই চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি বাণিজ্য বিরোধ চলমান রয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ভারসাম্যহীন বলে মনে করে।

২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নিলে এই বিরোধ নতুন করে তীব্র হয়। ইইউর অভিযোগ ছিল, চীনের ভর্তুকি ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অন্যায্য প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। তবে চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ইউরোপীয় শুকরের মাংস, ব্র্যান্ডি ও দুগ্ধপণ্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে, যা অনেকেই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন।

পরবর্তী সময়ে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে, চীন ইউরোপীয় ব্র্যান্ডি (এক ধরনের মদ), উৎপাদকদের দাম বাড়াতে বাধ্য করে অথবা সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের মুখে ফেলে।

অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক হলো এমন এক ধরনের অতিরিক্ত শুল্ক যা কোনো দেশ আরোপ করে যখন অন্য কোনো দেশ থেকে আসা পণ্যগুলো তাদের নিজেদের দেশের বাজারে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি হয়, যা দেশীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৫০ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ চলতি মাসে বলেন, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সমাধান না হলে ইউরোপ চীনের বিরুদ্ধে শুল্কসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।

বাণিজ্য বিরোধের পাশাপাশি ইউক্রেনে ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়েও চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগে চীনের প্রতি আহ্বান জানালেও বেইজিং এখনো সে পথে অগ্রসর হওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

সূত্র: এএফপি

 

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/151102