বিনা বিচারে সরাসরি জান্নাত যাবেন যারা

বিনা বিচারে সরাসরি জান্নাত যাবেন যারা

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের তিন মুঠি পরিমাণ।’ (সুনানে তিরমিজি, ২৪৩৭)

এই হাদিসে উল্লিখিত ‘সত্তর হাজার’ সংখ্যাটি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়। আরবি ভাষায়, এটি প্রচুরতা ও আধিক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, আল্লাহতায়ালা তাঁর সীমাহীন দয়ার প্রকাশস্বরূপ অসংখ্য মানুষকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

মুহাদ্দিসগণ বলেন, যখন বলা হয়—‘প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার’— তখন এটি একটি গণনাযোগ্য বিশাল সংখ্যাকে নির্দেশ করে, যা আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতাকে প্রতিফলিত করে। এর পরেও বলা হয়েছে, ‘আর আমার প্রভুর তিন মুঠি পরিমাণ’— এই অংশটি বোঝায় যে, এত বিশাল সংখ্যার পরেও অতিরিক্ত আরও অসংখ্য লোক থাকবে, যাদের সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন।

ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘এতে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা ও নবি (সা.)-এর উম্মতের বিশেষ মর্যাদা প্রতিফলিত হয়েছে।’ (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১১, পৃ. ৪১৩)। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘এই ‘মুঠি’ (হাছইয়াত) হচ্ছে রহমতের রূপক প্রকাশ। অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আরও অসংখ্য মানুষকে বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ এই বিশেষ মর্যাদা কাদের জন্য, তা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় স্পষ্ট করা হয়েছে। এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা হলেন সেই লোক, ‘যারা রুকইয়া করাতে বলে না, দগ্ধ চিকিৎসা নেয় না, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে না এবং সর্বাংশে তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে।’ (সহিহ বুখারি, ৬৪৭২; সহিহ মুসলিম, ২২০)

এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রমাণ করে যে, তারা তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)-এর এক উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। তাদের অন্তর দুনিয়াবি ভরসা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাদের জীবনযাপনের মূলনীতি হলো:

তাওয়াক্কুল: তারা নিজেদের সর্বাংশে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয়।

কুসংস্কার থেকে মুক্তি: তারা ভাগ্যনির্ভর কোনো কুসংস্কার, অশুভ লক্ষণ বা জাগতিক টোটকার ওপর নির্ভর করে না। ইমাম নববি (রহ.) লিখেছেন, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি এমন একটি সম্মান, যা অন্য কোনো উম্মত পায়নি। (শরহ সহিহ মুসলিম)

প্রকৃত তাওয়াক্কুল: আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও নির্ভরতা অর্জন করা। আমাদের বুঝতে হবে যে, ফলাফল একমাত্র আল্লাহর হাতে। চেষ্টা করার পর ফলের জন্য শুধু তাঁর ওপর ভরসা করতে হবে।

আল্লাহর প্রতি একান্ত ঈমান: চিকিৎসা বা অন্য জাগতিক উপকরণের ওপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে। যদিও চিকিৎসা গ্রহণ করা সুন্নাত, কিন্তু আরোগ্য লাভের জন্য কেবল আল্লাহর ওপরই ভরসা রাখতে হবে।

আল্লাহর সীমাহীন দয়ার এক জ্বলন্ত দলিল। মানবীয় বুদ্ধি যতই হিসাব কষে, আল্লাহর করুণা ততই সেই সীমানা ছাড়িয়ে যায়। আমাদেরও উচিত— এই সৌভাগ্যবান দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা করা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসারে জীবন গঠন করা।

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/150953