ভালুকায় যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামির রিমান্ড আবেদন
ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় ১০ আসামির মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আদালতে পাঠিয়েছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আগামী ২২ ডিসেম্বর জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৮ নম্বর আমলি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়
আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সংশ্লিষ্ট আদালতের মাধ্যমে আসামিদের ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামিরা হলেন- ভালুকা উপজেলার বাসিন্দা আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাসিন্দা মো. নাজমুল (২১)।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে নিহতের ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পরই ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজের ছবি চিহ্নিত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় ১০ আসামির মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে র্যাব-১৪ কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়া অপর ৭ আসামিকে থানা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ভালুকার জামিরদিয়া ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেডের কারখানার শ্রমিক ছিলেন নিহত দিপু চন্দ্র দাস (২৭)। তিনি তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা রবি চন্দ্র দাসের ছেলে।
পুলিশ জানায়, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ভালুকা থানাধীন ১০নং হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড ফ্যাক্টরির শ্রমিক ও উত্তেজিত জনতার গণপিপটুনির শিকার হয়ে দিপু চন্দ্র নিহত হন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিক-জনতা লাশ মহাসড়কে নিয়ে গিয়ে অবরোধ করে এবং লাশে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করেন এবং সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ আসামির মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব- ১৪ এর একটি দল। অপর ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন, তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮) ও মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)। এদের মধ্যে আলমগীর হোসেন পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির ফ্লোর ম্যানেজার এবং মিরাজ হোসেন আকন কোয়ালিটি ইনচার্জ।
এ ঘটনায় র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করে জনতার হাতে হস্তান্তর করে কারখানার লোকজন। কিন্তু ধর্মীয় অবমাননার বিষয়টি খুবই অস্পষ্ট। নিহত যুবক কাকে, কী বলেছে এটি খোঁজার চেষ্টা করলেও বিষয়টি এখন পযর্ন্ত কেউ বলতে পারেনি। তবে আমরা জানতে পেরেছি- কাজ করার সময় ফ্লোরেই হঠাৎ বাগবিতণ্ডা শুরু হয় এবং তাকে কোনোভাবেই আর কারখানার ভেতরে রাখা যাচ্ছিল না। এরপর ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। এ ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/150850