বিশ্ববাজারে রুপার দামে নতুন রেকর্ড
বিশ্ববাজারে রুপার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে মার্কিন শ্রমবাজারের দুর্বল তথ্য প্রকাশের পর স্বর্ণের দামও বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা মূল্যবান ধাতুর বাজারকে চাঙ্গা করছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) স্পট সিলভারের দাম একদিনে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৬৫ দশমিক ৯৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে, লেনদেনের শুরুতে রুপার দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৫২ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ সংকট, শিল্প খাতে শক্তিশালী চাহিদা এবং বাড়তে থাকা জল্পনামূলক বিনিয়োগ-এই তিনটি বিষয় মিলেই রুপার দামে এমন উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। স্বাধীন বিশ্লেষক রস নরম্যান বলেন, রুপা এখন বিকল্প বিনিয়োগ বাজারের অন্যতম আলোচিত উপাদান হয়ে উঠেছে। চাহিদার দিক থেকে রুপার ভবিষ্যৎ এখনও অত্যন্ত ইতিবাচক। রুপা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা সবুজ জ্বালানি কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সরবরাহ পরিস্থিতি অত্যন্ত আঁটসাঁট থাকায় বিনিয়োগকারীরা এই ধাতুর দিকে আরও ঝুঁকছেন।
রুপার পাশাপাশি স্বর্ণের দামেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। স্পট মার্কেটে রুপার দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ৩১৭ দশমিক ৬৫ ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৪০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রুপার দাম বেড়েছে প্রায় ১২৮ শতাংশ। অন্যদিকে, স্বর্ণের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। অ্যাক্টিভট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভাঞ্জেলিস্টা বলেন, ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত অবস্থান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
মার্কিন শ্রমবাজারের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, খামার বহির্ভূত খাতে নতুন করে ৬৪ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হলেও নভেম্বর মাসে দেশটির বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। এই তথ্য শ্রমবাজারে ধীরগতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোক্তা মূল্য সূচক এবং শুক্রবার ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়ের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ সুদের হার নিয়ে বাজারের দিকনির্দেশনা দেবে।
এর আগে গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরের তৃতীয় ও শেষ কোয়ার্টার-পয়েন্ট সুদহার কমানোর ঘোষণা দেয়। ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তব্য বাজারে তুলনামূলকভাবে কম কড়াকড়ি হিসেবে দেখা হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ২০২৬ সালে দুটি ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমানোর সম্ভাবনা বিবেচনায় নিচ্ছেন। কম সুদের হারের পরিবেশে সাধারণত স্বর্ণের মতো অ-ফলনশীল সম্পদের চাহিদা বাড়ে।
ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও দেশটি থেকে বের হওয়া সব অনুমোদিত তেল ট্যাঙ্কার ‘অবরোধ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/150420