লাগামহীন ওষুধের দাম নজরদারি নেই কোনো
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : দেশের নামীদামি বিভিন্ন কোম্পানির খাবার ওষুধের মূল্য বেড়েই চলেছে। ওষুধ ক্রয় করতে এসে প্রতিনিয়ত রোগীর স্বজনদের সাথে দাম নিয়ে ফার্মেসিগুলোতে হচ্ছে দ্বন্দ্ব। শহরের তুলনায় এর প্রভাব পড়েছে গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের উপর। ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মত রোগের ওষুধগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে রোগী, চিকিৎসক, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ফার্মেসি মালিকদের ভাষ্য, প্রতিনিয়ত ওষুধের মুল্য বৃদ্ধির ফলে রোগীর স্বজনদের সাথে বাকবিতন্ডা লেগেই আছে। এবার যেভাবে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাধীনতার পর এমন হারে কখনও বৃদ্ধি পায়নি।
ফার্মেসি মালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এক বছরে দুই/একটি কোম্পানি ছাড়া প্রায় অধিকাংশ কোম্পানি বিভিন্ন ওষুধের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। নামিদামি কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপটা, রেডিয়েন্ট, এসিআই, পপুলার, এসকেএফ এর মত ফার্মাসিটিউক্যালের ওষুধের দাম বেড়েই চলেছে। গত ৬ মাস আগে স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালের ব্যাথানাশক টোরাক্স-১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ১ পিচের দাম ছিল ১০ টাকা, বর্তমানে হয়েছে ২০ টাকা, এন্টিবায়োটিক জিম্যাক্স-৫০০ মিলিগ্রাম ১ পিচের দাম ছিল ৩৫ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা, সেকলো-২০ মিলিগ্রাম এর দাম ছিল ৫ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা।
এসিআই ফার্মাসিটিউক্যালের টেট্রাসল সল্যুশন ৩০ মিলিগ্রাম ৬৮ থেকে ১২৫ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল ৬০ মিলিগ্রাম সিরাপ ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক, ফেক্সোফেনাডিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, মন্টিলুকাস্টসহ বিভিন্ন ওষুধের দাম বেড়েছে। সর্দি-কাশির সিরাপ ও ইনহেলারসহ নানা ওষুধের দাম গড়ে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফার্মাসিটিউক্যালগুলো ওষুধের দাম প্রতিযোগিতা করে বাড়াচ্ছে। এতে করে বেকায়দায় পড়েছে রোগীর স্বজনরা।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়াবেটিকস আক্রান্ত কালাই উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের সাজ্জাদুর রহমান জানান, প্রতিদিন সকালে ও রাতে হিমুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। এছাড়া প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার ওষুধ খেতে হয়।
যেভাবে ওষুধের দাম বেড়েছে তাতে পাঁচ হাজার টাকারও বেশি লাগছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে গেলে শুধু স্যালাইন আর প্যারাসিটামল দেয়, বাকি সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়। এখন আর পারছি না। টাকার অভাবে কখনও ইনজেকশন না নিয়েই শুধু খাবার ওষুধ খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সদর উপজেলার কোমরগ্রামে বাসিন্দা আব্দুল মতিন। তিনি ঢাকার উত্তরা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার ছেলে জুয়েল প্রামানিক বলেন, তার বাবার চিকিৎসার একটি ইনজেকশনের দাম ছিল ৬,০০০ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৫০০ টাকায়। প্রতিমাসে তিনটি ইনজেকশন পুশ করতে হয়। দাম বাড়ার কারণে তিনটির স্থলে এখন দুইটি পুশ করছেন। যদি আবার বাড়ে তাহলে হয়তো একেবারেই পুশ করা বন্ধ করতে হবে।
জয়পুরহাট শহরের বাটারমোড়ের নিউ সওদাগর ফার্মেসির মালিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, তিনি দীর্ঘদিন থেকে ফার্মেসি দিয়ে ওষুধের ব্যাবসা করছেন। গত এক বছরে যেভাবে ওষুধের দাম বেড়ে ছে এর আগে কখনও এভাবে বাড়েনি। কোম্পানির বেধেঁ দেওয়া খুচরা মূল্যর চেয়েও ১০ শতাংশ কম মূল্যে আমরা ওষুধ বিক্রি করি। সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে এই দফতরে নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জেলা ওষুধ পরিদর্শক তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ইতোমধ্যে দাম নিয়ে ওষুধ প্রশাসন একটি নীতিমালা করেছে। বাজারে ওষুধের দাম কমতে শুরুও করেছে। এখন থেকে কোম্পানিগুলোর ইচ্ছা মত আর দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। খুব শ্রীঘই সকল কোম্পানির ওষুধ ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/150179