এক দশকে রংপুরসহ তিন জেলার দুই সহস্রাধিক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন
সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর : বেতন কম পাওয়া, অবৈধভাবে অবস্থান, চাকরি না পাওয়া, ভিসা ও চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় আহত বা অসুস্থতাসহ নানা সংকটে গত এক দশকে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার প্রায় ২ হাজার ৮৯৭ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ফারাক, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা এবং মানবিক মর্যাদাহানির শিকার হয়ে অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রবাসজীবন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের রংপুর অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ফিরে আসা এসব প্রবাসীর বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, দেশে ফেরা প্রবাসীদের অধিকাংশই ডে-লেবার, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, পোশাকশ্রমিক, গৃহকর্মী এবং শিল্পকারখানার শ্রমিক। তারা মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতেন। চুক্তি অনুযায়ী কাজ বা বেতন না পাওয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং মালিকপক্ষের অবহেলায় অনেকেই সেখান থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিশেষ করে লিবিয়ায় অবস্থানরত কিছু প্রবাসী নির্যাতন, সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে ফিরেছেন। এছাড়া সৌদি আরবে কর্মরত নারী গৃহকর্মীদের একটি অংশ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা, বেতন বন্ধ রাখা কিংবা জোরপূর্বক অতিরিক্ত কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে।
দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের অনেকেই এখন চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য ধারদেনা করে কিংবা জমিজমা বিক্রি করে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন, দেশে ফিরে এসে তা ফেরত পাওয়ার কোনো পথ দেখছেন না তারা। ফলে কেউ কেউ বেকারত্বে দিন কাটাচ্ছেন, আবার কেউ খণ্ডকালীন কাজ করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশে যাওয়ার আগে প্রবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, সঠিক তথ্য ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। একইসাথে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার রক্ষায় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি উঠেছে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/150161