জাতীয় নির্বাচনের পরিপত্র জারি, জামানত ৫০ হাজার টাকা

জাতীয় নির্বাচনের পরিপত্র জারি, জামানত ৫০ হাজার টাকা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, জামানত ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিস্তারিত পদ্ধতি জানিয়ে পরিপত্র-২ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
 
 
 
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে এ পরিপত্র জারি করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। 
 
 
পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১৩ অনুচ্ছেদের (১) ও (২) দফা এবং নির্বাচন পরিচালা বিধিমালা, ২০০৮ এর ৪ বিধি অনুসারে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থী কর্তৃক জামানতের অর্থ প্রদান ও নিম্নেবর্ণিত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। 
 
 
এতে আরও বলা হয়েছে, নগদ বা ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশনের অনুকুলে মনোনয়নপত্রের সাথে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে; অথবা এছাড়াও একটি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীর অনুকূলে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলে সে প্রার্থীর অনুকূলে শুধু একটি মাত্র জামানত প্রদান করতে হবে। অন্য মনোনয়নপত্রের সাথে চালান বা রসিদ এর সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান করতে হবে।
 
 
এদিকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন নির্ধারিত হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলে কী কী পন্থা অনুসরণ করতে হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে ইসি।
 
 
দাখিল পদ্ধতি : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ এবং সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে যোগ্য প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট সরাসরি মনোনয়নপত্র (ফরম-১) দাখিল করতে পারবেন। প্রার্থী ছাড়াও প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীও তা দাখিল করতে পারবেন।
 
 
সময়সীমা : নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বা তার পূর্বে যেকোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। দাখিলের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৫টার পর কোনো মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে না।
 
 
গ্রহণ ও রসিদ : মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার সময় ক্রমিক নম্বর দিতে হবে (রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের ক্ষেত্রে ‘রিঅ-’ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের ক্ষেত্রে ‘সরিঅ-’ দিয়ে নম্বর প্রদান করা যেতে পারে)। দাখিলকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখসহ নোটিশ (মনোনয়নপত্রের পঞ্চম খণ্ড) প্রদান করতে হবে।
 
 
জামানতের পরিমাণ : প্রার্থীকে জামানত বাবদ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় জমা দিতে হবে। 
 
 
একাধিক মনোনয়নপত্র : কোনো প্রার্থীর অনুকূলে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলেও শুধুমাত্র একটি জামানত দিতে হবে। অন্যান্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মূল চালানের সত্যায়িত অনুলিপি সংযুক্ত করতে হবে।
 
 
জমা দেওয়ার কোড : জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা যেকোনো ব্যাংক/সরকারি ট্রেজারিতে ১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১ কোডে জমা দিতে হবে।
 
 
যোগ্যতা : প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে এবং অন্য কোনো মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষরদান করেননি এমন ব্যক্তি হতে হবে। 
 
 
দলীয় প্রত্যয়নপত্র : রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র (নমুনা অনুযায়ী) মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই জমা দিতে হবে।
 
 
চূড়ান্ত মনোনয়ন : কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল একটি এলাকায় একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে, দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে ২০ জানুয়ারির বিকাল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত বলে গণ্য হবে। 
 
 
প্রার্থিতা প্রত্যাহার : যেকোনো বৈধ মনোনীত প্রার্থী লিখিত ও স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যে বা তার পূর্বে নিজে বা লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারবেন। একবার লিখিত নোটিশ দেওয়া হলে বা দল কর্তৃক চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলে তা বাতিল করা যাবে না।
 
 
বাছাই প্রক্রিয়া : রিটার্নিং অফিসার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১৪ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন। বাছাইয়ের সময় প্রার্থীরা, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী এবং প্রার্থী কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে পারবেন। 
 
 
সারবত্তাহীন ত্রুটি : ছোটোখাটো ত্রুটির জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি কোনো ত্রুটি তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব হয়, তবে দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। তবে হলফনামার কোনো তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না।
 
 
ভোটার তালিকার তথ্যের শুদ্ধতা : প্রার্থীর নামসহ অন্যান্য তথ্য ভোটার তালিকার তথ্যের সাথে হুবহু না মিললেও মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। সেক্ষেত্রে এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট বা স্বীকৃত কোনো পরিচয়পত্র দেখে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে। 
 
 
আপিল ও নিষ্পত্তি : মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৫ জানুয়ারি হতে ১১ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।নির্বাচন কমিশন ১২ জানুয়ারি হতে ১৮ জানুয়ারি মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবেন।
 
 
ঋণ খেলাপী যাচাই : মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের ঋণ খেলাপী সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছকে (পরিশিষ্ট-খ) প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB)-তে প্রেরণ করতে হবে।
 
 
অঙ্গীকারনামা : রাজনৈতিক দল কর্তৃক ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ এর বিধি ২৯ অনুযায়ী তফসিল-১ (পরিশিষ্ট-ঙ) এবং প্রার্থী কর্তৃক বিধি ৩০ অনুযায়ী তফসিল-২ (পরিশিষ্ট-চ) অনুযায়ী অঙ্গীকারনামা মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিল করতে হবে।
 
 
অফিস খোলা রাখা : তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/149926