নাটোরে আয়না বুড়ির জঙ্গল এখন উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম
জুলফিকার হায়দার জোসেফ ও মো. মামুনুর রশীদ, নাটোর: প্রায় শতবর্ষ আগে নাটোর শহরের অধিবাসীদের কাছে কানাইখালী মাঠটি ছিল আয়না বুড়ির আদার (জঙ্গল) নামে পরিচিত। ধূ ধূ জনশূন্য স্থানে ছোট্ট ঘরে কুপিবাতি জ্বালিয়ে নিঃসঙ্গ থাকতেন স্বজনহীন আয়না বুড়ি নামে এক নারী। গা ছমছম নির্জন অরণ্যে প্রবেশ ছিল খুবই দুঃসাহসিক ব্যাপার। সময়ের পরিক্রমায় সেই কানাইখালি মাঠটি বর্তমানে সদর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, ১৯৩৬ সালে নাটোর রাজবাড়ীর ছোট তরফের রাজ কুমার সৌখিন ক্রীড়ানুরাগী বীরেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর প্রায় ৩ দশমিক ৮৯ একর বা ১২ বিঘা জমি দান করেন নাটোর টাউন ক্লাবে। আয়না বুড়ির আদারটির মালিক ছিলেন তিনি। সে সময় তৎকালীন মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট নরেন্দ্র কুমার মজুমদার নিজ প্রচেষ্টায় বীরেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুরের কাছ থেকে টাউন ক্লাবের নামে জমি বরাদ্দ করান। পরে ১৯৩৮ সালে ক্লাবের উদ্যোগে আদারটি কানাইখালী মাঠে পরিণত করা হয়।
পঞ্চাশের দশকে কলকাতা, আসামসহ বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের নামি-দামি খেলোয়াররা এ মাঠে আসতেন বিপুল আগ্রহ-উৎসাহে। এ মাঠে খেলার সুযোগ ছিল গৌরব আর আনন্দের। ১৯৭৯ সালে মাঠটি স্থানীয় মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে হস্তান্তর করেন নাটোর টাউন ক্লাব। পরে রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্মাণ করে সীমানা প্রাচীর।
সাবেক খেলায়ার ও লেখক মো. খালিদ বিন জালাল বাচ্চু জানান, এখানে পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে খেলেছেন বিখ্যাত সীতানাথ বসাক, বৃন্দাবন বসাক, বিশ্বনাথ বসাক, নীলু প্রামাণিক, রহমতুল্লাহ সরকার বাদল, শুকদেব বসাক, আবদুর রাজ্জাক (বাবু), গোলকিপার রাজ্জাক, আমজাদ হোসেনসহ অনেক খেলোয়ার।
প্রবীণ সাংবাদিক মো. রেজাউল করিম খান জানান, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে ফুটবল যাদুকর সামাদ সাহেবসহ নামকরা অনেক খেলোয়ার খেলেছেন এই মাঠে। বর্তমানে মাঠটি আধুনিক স্টেডিয়ামে রুপান্তর করা হলেও কিছু অংশ বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়ার অশোক কুমার চক্রবতী জানান, শহরের মুক্তমঞ্চের ভূমিকা নিয়ে প্রদর্শনী, মেলা, যাত্রা, সার্কাস, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অসংখ্য রাজনৈতিক ও গুণীজনের পদচারণায় কানাইখালী মাঠ হয়ে ওঠে গৌরবোজ্জ্বল পরিচয়ে ঐতিহ্যের ধারক। এ মাঠে নিয়মিত খেলাধূলা করে জাতীয় ফুটবল টিমের হয়ে তানভীর চৌধুরী, সোহেল রেজা, কাজলসহ অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণে নাটোরকে তুলে ধরেছেন। এছাড়া এখান থেকেই গড়ে উঠেছে দেশ বরেণ্য অনেক খেলোয়ার।
এদিকে গত দু'বছরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ গ্যালারি ও তিনতলা প্যাভিলিয়ন নির্মাণ বাস্তবায়ন শেষে নাটোর কানাইখালী মাঠ এখন সদর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম নামকরণ হয়েছে। সম্প্রতি মিনি স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করেছেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। ফলে আয়না বুড়ির আদার (জঙ্গল) থেকে কানাইখালি মাঠ এখন হয়েছে উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম।
নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসমা শাহিন বলেন, আগের মতো ভবিষ্যতেও নব উদ্যোমে নাটোর থেকে নতুন খেলোয়ার যাতে তৈরি হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/149848