বাংলাদেশে পেপাল চালুর সবুজ সংকেত
আইটি ডেস্ক : বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং লক্ষাধিক ফ্রিল্যান্সারের দীর্ঘদিনের আক্ষেপের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট জায়ান্ট ‘পেপাল’ অবশেষে বাংলাদেশে তাদের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহ্সান এইচ মনসুরের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এমনই আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি হবে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ, যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের বিশ্ববাজারে প্রবেশের পথকে করবে মসৃণ।
বিশ্বের প্রায় ২০০টিরও বেশি দেশে জনপ্রিয় এই ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়েটি বাংলাদেশে আসার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিশ্চিত করেছেন যে, পেপাল বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী। এর ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এখন খুব সহজেই ইউরোপ ও আমেরিকার মতো বড় বাজারগুলোতে তাদের পণ্য রফতানি করতে পারবেন।
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ছোট আকারের পণ্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। গভর্নর আহ্সান এইচ মনসুর উল্লেখ করেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে সবসময় ব্যাংকের এই দীর্ঘমেয়াদী দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। পেপাল চালু হলে এই জটিলতা দূর হবে এবং নামমাত্র সময়ে আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে।
পেপাল মূলত একটি অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম যা ব্যবহারকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার বা অর্থ আদান-প্রদানের সুবিধা দেয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ‘বায়ার প্রোটেকশন’ বা ক্রেতার সুরক্ষা এবং রিফান্ড পলিসি, যার কারণে বিশ্বজুড়ে ক্লায়েন্টরা পেপ্যালের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাংলাদেশে পেপাল চালু হলে যে তিনটি খাতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে তা হলো:
১. ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং: বর্তমানে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করেও অনেক সময় ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সরাসরি পেমেন্ট নিতে পারেন না। পেপাল না থাকায় অনেক বায়ার কাজ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। পূর্ণাঙ্গ পেপাল সেবা চালু হলে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের আয়ের অর্থ দ্রুত এবং নিরাপদে দেশে আনতে পারবেন, যা তাদের কাজের পরিধি বাড়াবে।
২. ই-কমার্স ও স্টার্টআপ: দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে পেপাল থাকলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করা সহজ হবে।
৩. বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ: বৈধ চ্যানেলে সহজে অর্থ আনার সুযোগ তৈরি হওয়ায় হুন্ডি বা অবৈধ লেনদেন কমে যাবে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পেপাল চালুর বিষয়ে একটি বড় ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা কেবল পেপ্যালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘জুম’ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। জুম-এর মাধ্যমে শুধু টাকা আনা যায়, কিন্তু ওয়ালেট হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এবার পূর্ণাঙ্গ পেপাল সার্ভিস চালুর উদ্যোগ তাই প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
পেপাল বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক সংবাদ, তবে এর বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। অতীতেও এমন প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে যা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ফ্রিল্যান্সার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে এই সেবা চালু করা প্রয়োজন। যদি পেপাল সফলভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে, তবে তা হবে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পথে অন্যতম বড় মাইলফলক। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবিক রূপায়ন ঘটে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/149116