শিক্ষক সংকটে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বগুড়া সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে, এতে হচ্ছে না কাঙ্খিত ক্লাস। ফলে পরিপূর্ণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের শিক্ষার্থীরা। চরের স্কুলে চাকরি করতে অনিহা শিক্ষকদের। শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, সামনে সরকার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেবে, তখন এ সমস্যার সমাধান হবে।
সরেজমিন উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের বেড়া পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুপুর ১২টার সময়ও স্কুলমাঠে খেলাধুলা করছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস চলছে মাত্র দু’টি শ্রেণিকক্ষে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। তাও একজন নতুন যোগদান করেছেন। তার আগে মাত্র দু’জন শিক্ষক এ বিদ্যালয়ে পাঠদান করাতেন। কয়েকদিন পরে এ স্কুলের একজন শিক্ষক দীর্ঘ সময়ের প্রশিক্ষণে যাবেন। অর্থাৎ আবারো এ স্কুলে দু’জন শিক্ষক পাঠদান করাবেন। স্কুলের প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংখ্যা ৬ জন। দু’জন শিক্ষকের মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি নাকি এ বিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভারপ্রাপ্তের ভারে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনেরও কোনও সংস্কার কাজ হয়নি। বেশ কয়েক বছর আগে নির্মিত স্কুল ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে।
পলেস্তারা খসে পড়ার ভয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বেশকিছু সমস্যায় পাঠগ্রহণ করছেন। বেশ কয়েকবছর আগে নির্মিত ওয়াশ ব্লক কয়েক বছর ধরেই রয়েছে তালাবদ্ধ। প্রতিবছর স্লিপের টাকা দিয়ে কী করা হয় সে বিষয়েও জানেন না ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের প্রায় সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র একই। প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংখ্যার অর্ধেক। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি করে ক্লাস হচ্ছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা উপস্থিত হলেও কোনও বিষয়ের ক্লাস এখনো একদিনও হয়নি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় মোট ১৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১১৪টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে মোট ৬৮ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। এর মধ্যে চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া উপজেলার ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বেড়া পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন আমাদের স্কুলে মাত্র ৩ থেকে ৪টি করে ক্লাস হয়। স্যার নাই, তাই কম ক্লাস হয়। আমাদের ক্লাসরুমের ছাদ থেকে সিমেন্ট ঝুরঝুর খসে পড়ে। অনেক সময় আমাদের মাথায় পড়ে। স্কুলে কোনও বাথরুম নেই, একটি বাথরুম থাকলেও সেখানে পানি নেই।
এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহনেওয়াজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আমি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। মাত্র দু’জন শিক্ষক দিয়ে অনেক কষ্টে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি। স্কুলের দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়ছে, বেশ সমস্যায় আছি।
চর জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাসেদ সরকার জানান, চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষক সংকট রয়েছে এবং শিক্ষক সংকটের জন্য চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পরিপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহতাবুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে প্রতিদিন শিক্ষকদের নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যাতায়াত করতে হয় এবং অনেক টাকা খরচ হয়। তাই এসব স্কুলের শিক্ষকরা বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তাই চরাঞ্চলে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে সরকার ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/148741