অনলাইন কেনাকাটায় নতুন বিপ্লব: ক্রেতাদের ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে আসছে এআই
আইটি ডেস্ক : অনলাইন কেনাকাটা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু হাজারো পণ্যের ভিড়ে সঠিক জিনিসটি সেরা দামে খুঁজে বের করা অনেক সময় ক্লান্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তি বিশ্বের মহারথীরা নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-ভিত্তিক ‘শপিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’। গুগল ও ওপেন এআই-এর পর এবার মাইক্রোসফটও তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য এমন এক সুবিধা চালু করেছে, যা কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আমূল বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট সম্প্রতি তাদের এজ ব্রাউজারে ‘কো-পাইলট’ টুলের মাধ্যমে নতুন শপিংকেন্দ্রিক এআই ফিচার যুক্ত করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও টেকক্রাঞ্চ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ফিচারটির মূল লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের কেনাকাটা-সংক্রান্ত গবেষণা, পণ্যের তুলনা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা। এতদিন ধরে মানুষ যেভাবে ম্যানুয়ালি বিভিন্ন সাইট ঘুরে পণ্য যাচাই করতেন, এআই সেই কাজটিকে এখন স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুল করে তুলছে।
মাইক্রোসফটের কো-পাইলট কী সুবিধা দেবে? : মাইক্রোসফট জানিয়েছে, এজ ব্রাউজারের সাইডবারে থাকা কো-পাইলট মোড ব্যবহার করে ক্রেতারা এখন রিয়েল-টাইমে (তৎক্ষণাৎ) পণ্যের নানা তথ্য জানতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে:
১. দামের তুলনা: একই পণ্য অন্য কোনো ওয়েবসাইটে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া।
২. প্রাইস হিস্ট্রি ও অফার: পণ্যটির দাম গত কয়েক মাসে কমেছে না বেড়েছে এবং বর্তমানে কোনো গোপন কুপন বা ক্যাশব্যাক সুবিধা আছে কি না, তা খুঁজে বের করা।
৩. রিভিউ বিশ্লেষণ: হাজার হাজার কাস্টমার রিভিউ পড়ে তার সারাংশ তৈরি করা, যাতে ক্রেতা দ্রুত পণ্যের মান সম্পর্কে ধারণা পান।
৪. স্মার্ট ট্যাব ম্যানেজমেন্ট: ব্রাউজারে যদি একাধিক ই-কমার্স সাইটের ট্যাব খোলা থাকে, তবে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেবে কোন সাইটটি বর্তমানে সেরা ডিল দিচ্ছে।
শপিংয়ে এআই-এর জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে? : অনলাইন শপিংয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো তথ্যের সত্যতা যাচাই এবং সেরা অফারটি খুঁজে বের করা। আগে এই কাজের জন্য ব্যবহারকারীকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হতো। এখন এআই শপিং অ্যাসিস্ট্যান্ট মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ডেটা বিশ্লেষণ করে সেরা পরামর্শটি দিচ্ছে। এটি কেবল দামই তুলনা করে না, বরং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী পণ্য সাজেস্ট বা সুপারিশ করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে কোনো পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা আছে কি না, সে বিষয়েও পূর্বাভাস দিতে সক্ষম এসব স্মার্ট টুল।
প্রতিযোগিতায় ওপেন এআই ও পারপ্লেক্সিটি : মাইক্রোসফট যখন ব্রাউজার দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছে, তখন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেন এআই এবং সার্চ ইঞ্জিন পারপ্লেক্সিটি ভিন্ন পথে হাঁটছে। ওপেন এআই তাদের চ্যাটবটে এমন সুবিধা এনেছে, যেখানে ব্যবহারকারী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি চ্যাটজিপিটিকে বলেন, “১০০০ ডলারের নিচে ১৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের একটি ভালো গেমিং ল্যাপটপ দেখাও”—তবে এআই তৎক্ষণাৎ সেরা অপশনগুলো লিস্টিং আকারে দেখাবে। এছাড়া কোনো দামী ব্র্যান্ডের পোশাকের ছবি আপলোড করে এর কমদামি বিকল্প খুঁজে দিতে বললে, সেটাও নিমেষে করে দেবে এই প্রযুক্তি।
অন্যদিকে, পারপ্লেক্সিটি তাদের ‘মেমোরি’ ফিচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি ব্যবহারকারীর ভৌগোলিক অবস্থান, পেশা এবং পূর্ববর্তী সার্চ হিস্ট্রি মনে রেখে অনেক বেশি ব্যক্তিগত বা ‘পার্সোনালাইজড’ শপিং সাজেশন প্রদান করছে।
অনলাইন শপিংয়ের ভবিষ্যৎ যে ‘ব্যক্তিগত সুপারিশ’ এবং ‘স্মার্ট সিদ্ধান্তের’ ওপর নির্ভর করছে, তা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপে স্পষ্ট। এআই এখন আর কেবল চ্যাটবট নয়, বরং এটি একজন দক্ষ ‘শপিং গাইড’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে ঠিকই, তবে অ্যালগোরিদমগুলো যেন নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের প্রতি পক্ষপাত না দেখায় বা স্পন্সরড পণ্যকে সেরা বলে চালিয়ে না দেয় সেদিকেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/148230