ইউটিউবে আসছে ‘কাস্টম ফিড’: হোমপেজে নিজের পছন্দমতো ভিডিও দেখার দারুণ সুবিধা

ইউটিউবে আসছে ‘কাস্টম ফিড’: হোমপেজে নিজের পছন্দমতো ভিডিও দেখার দারুণ সুবিধা

আইটি ডেস্ক :  ইউটিউব খুললেই হোমপেজে অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওর ভিড় আর বিরক্তি ব্যবহারকারীদের এই দীর্ঘদিনের অভিযোগের অবসান হতে যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি এমন এক যুগান্তকারী ফিচার নিয়ে আসছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেই ঠিক করে দেবেন তিনি কী দেখতে চান, আর অ্যালগোরিদম কেবল সেই নির্দেশনা মেনেই কনটেন্ট সাজাবে।

ইউটিউবের বর্তমান হোমফিড বা মূল পাতাটি মূলত অ্যালগোরিদম-নির্ভর (গাণিতিক বিন্যাস বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি)। এখানে ব্যবহারকারীর পূর্ববর্তী আচরণের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও সাজেস্ট করা হয়, যা অনেক সময়ই ব্যবহারকারীর বর্তমান আগ্রহের সঙ্গে মেলে না। টেকক্র্যাঞ্চ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সমস্যা সমাধানে ‘ইয়োর কাস্টম ফিড’ নামে একটি নতুন ফিচার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে গুগল মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি।

যেভাবে কাজ করবে কাস্টম ফিড : সাধারণত ইউটিউবের ‘হোম’ ট্যাবে সব ধরণের ভিডিওর মিশ্রণ থাকে। তবে নতুন এই ফিচারটি চালু হলে হোম ট্যাবের পাশেই ‘ইয়োর কাস্টম ফিড’ নামে একটি নতুন অপশন যুক্ত হবে। এই অপশনে ক্লিক করে ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রম্পট (লিখিত নির্দেশনা) দিতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবহারকারী যদি এই মুহূর্তে মহাকাশ বিজ্ঞান কিংবা বাঙালি রান্নার রেসিপি নিয়ে ভিডিও দেখতে চান, তবে তাকে কেবল সেই বিষয়টি লিখে দিতে হবে। ইউটিউবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই তখন হোমফিডের অপ্রয়োজনীয় ভিডিওগুলো সরিয়ে ফেলে শুধুমাত্র ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ভিডিওর তালিকা সাজিয়ে দেবে। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী যা বলবেন, ইউটিউব ঠিক তাই দেখাবে।

অবাঞ্ছিত ভিডিওর দিন শেষ : এতদিন ব্যবহারকারীদের ফিড পরিষ্কার রাখতে ‘নট ইন্টারেস্টেড’  বা ‘ডোন্ট রেকমেন্ড চ্যানেল’ এর মতো অপশনগুলোতে বারবার ক্লিক করতে হতো, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর। নতুন এই ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীদের সেই ঝামেলা পোহাতে হবে না। তারা তাদের বর্তমান মুড বা প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূর্ণ ফিডটি মুহূর্তের মধ্যে কাস্টমাইজ বা পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। এতে ব্যবহারকারীর সময় বাঁচবে এবং অবাঞ্ছিত ভিডিও স্ক্রল করার ক্লান্তি দূর হবে।

প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা :শুধুমাত্র ইউটিউবই নয়, বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে ‘পার্সোনালাইজেশন’ বা ব্যক্তিগতকরণের দিকে ঝুঁকছে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোও। মেটার মালিকানাধীন ‘থ্রেডস’ সম্প্রতি তাদের অ্যালগোরিদম কনফিগারেশন নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে ইলন মাস্কের এক্স (সাবেক টুইটার) তাদের এআই চ্যাটবট ‘গ্রোক’-কে কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীদের ফিড কাস্টমাইজ করার সুবিধা আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিযোগীদের এই দৌড়ে ইউটিউবও তাদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে।


ইউটিউবের এই উদ্যোগ ডিজিটাল কনটেন্ট ভোগের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতদিন প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে ঠিক করে দিতো দর্শক কী দেখবে, যা অনেক সময় দর্শকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া মনে হতো। ‘কাস্টম ফিড’ ফিচারটি সফল হলে ক্ষমতার ভারসাম্য প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যবহারকারীর হাতে চলে আসবে। এর ফলে একদিকে যেমন ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি বাড়বে, অন্যদিকে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরও নির্দিষ্ট দর্শকদের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইউটিউবের ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নয়নে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

 

 

 

পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/148229