বগুড়ায় দখলমুক্ত হয় না ফুটপাত পুলিশ-হকার লুকোচুরি খেলা
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় পুলিশ আসে, পুলিশ চলে যায়, কিন্তু দখলমুক্ত হয় না ফুটপাত। অভিযানে নামলেই পুলিশের সাথে হকারদের শুরু হয় লুকোচুরি খেলা। পুলিশ এলে ফুটপাত থেকে হকাররা সরে যান, আবার পুলিশ ফিরে গেলেই ফুটপাত দখলে নিয়ে পসরা সাজান হকাররা।

ফুটপাত নিয়ে পুলিশ-হকার লুকোচুরির খেলা চললেও চরমদুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা। এই দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। শুধু ফুটপাতই নয়, সড়কের একাংশ দখলে নিয়েও পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করে দুর্ভোগ বাড়ান হকাররা। হকারদের কারণে ফুটপাতে পা ফেলতে পারেন না পথচারীরা। গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে পড়েন রাস্তায়। যে কারণে যানজট বাড়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে।

আসছে শীত মৌসুম। এ জন্য শীতের কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই শহরে ফুটপাত বেশি বেদখল হচ্ছে। শীতের কাপড় বেচা-কেনার কারণে ফুটপাতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ফুটপাত ছাড়াও সড়কের একাংশ দখল করে হকাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের একাংশে শীতের নতুন-পুরাতন কাপড় ভর্তি ভ্যান দাঁড়িয়ে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যান হকাররা। এভাবে ভ্যানে করে কাপড় রেখে ব্যবসা করে বেশি লাভবান হওয়ায় এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকে পড়ছেন এই ব্যবসায়।
পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, মার্কেটে যাদের দোকান আছে এমন একাধিক কাপড় ব্যবসায়ী কর্মচারী বা হকারদের ব্যবহার করে এভাবে ব্যবসা করছেন। একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কর্মচারী বা হকারদের মাধ্যমে দিনে ১০-১২টি করে ভ্যান রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে ব্যবসা করছেন। ফলে এতে শহরে যানজট বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো সাতমাথা এলাকাসহ শহরের চাঁদনী বাজার (কাঠালতলা), ফতেহ আলী মোড়, স্টেশন রোড, রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের সামনে, ফলপট্টি, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, নবাববাড়ী সড়ক, ফুলপট্টি, পোস্ট অফিসের সামনে ও পাশে, সাতমাথা এবং শেরপুর সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে ফুটপাত ও সড়কের একাংশ হকারদের দখলে চলে গেছে।

এসব স্থানে অবৈধভাবে ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছেন হকাররা। এতে চরমদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ফুটপাত দিয়ে চলতে পারছেন না তারা। সেই সাথে যানজটে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যানজটে পড়ে সময় নষ্ট হচ্ছে। ১০ মিনিটের গন্তব্যে যেতে সময় লাগছে একঘন্টা।
এদিকে, ফুটপাত নিয়ে বাণিজ্যও চলছে জমজমাট। ফুটপাতের মালিক বগুড়া পৌরসভা। অথচ ফুটপাত নিয়ে বাণিজ্য করছেন এক শ্রেণির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ফুটপাত সংলগ্ন দোকান রয়েছে এমন কিছু ব্যবসায়ী ‘ডাবল’ ব্যবসা করছেন এখন। তারা দোকানের সামনে ফুটপাতের অংশ বিশেষ হকারদের ‘ভাড়া’ দেন। অথচ ফুটপাত বগুড়া পৌরসভার সম্পত্তি।
ফুটপাত ভাড়া দেওয়ার অধিকার নেই তাদের। এই ফুটপাত শুধু পথচারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অথচ ফুটপাত এমনকি রাস্তার একাংশও ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হকার বলেন, ফুটপাতে তিন থেকে পাঁচ ফুট জায়গার জন্য ব্যবসায়ীদের তারা প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৫শ’ এমনকি এক হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। সেইসাথে দোকানের সামনে রাস্তার একাংশেরও ভাড়া নেয় ওই ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বৃহত্তর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, বগুড়া ফুটপাত দখল ও যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছিলেন।
পরবর্তীতে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে প্রশাসন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযানে নেমে হকারদের উচ্ছেদ করেন। কিন্তু পরে আবার ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়ে দিব্বি ব্যবসা করে যাচ্ছেন হকাররা। এতে ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, এক শ্রেণির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও কর্মচারী দিয়ে ভ্যানে করে সড়কে শীতের কাপড় ব্যবসায় নেমে শহরে যানজট বাড়াচ্ছেন। সেইসাথে নিজ দোকানের সামনে ফুটপাত ভাড়া দিয়েও ডাবল রোজগার করছেন, যা অবৈধ। তিনি ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের জোড়ালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নাজমুল নামে একজন হকার বলেন, ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করা তাদের উচিত নয়। কিন্তু পেটের দায়ে তাদের রাস্তায় নামতে হয়। ফুটপাতে কেনা-বেচা বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গেলে তাদের অন্য স্থানে পুনর্বাসন করতে হবে।
এ ব্যাপারে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক ও মিডিয়া) আতোয়ার রহমান বলেন, প্রতিদিনই শহরে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। কিন্তু হকারদের একদিক থেকে তুলে দিলে আরেক দিকে গিয়ে বসে। যে কারণে স্থায়ীভাবে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ (টিআই) সালেকুজ্জামান খাঁন নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সাধ্যমত কাজ করছে। প্রায়ই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে।
কিন্তু ফুটপাতে পুলিশ গেলে পসরা তুলে নিয়ে হকাররা সটকে পড়ছেন, আবার পুলিশ চলে গেলে তারা আবার ফুটপাতে বসে পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ভালো মানের দোকান বা শোরুম আছে এমন ব্যবসায়ীরাও ভ্যানে শীতের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছেন। শহরের ৩শর বেশি ভ্যানে কাপড় ব্যবসা চলছে। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
পোস্ট লিংক : https://www.dailykaratoa.com/article/147751